
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচটা ছিল সেমিফাইনালের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই ম্যাচের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছিল কারা যাবে ভারতের সঙ্গে ফাইনালে। শুক্রবার রাতে সেই লড়াইয়ে রোমাঞ্চ ছড়ালেও শেষ হাসি হাসল পাকিস্তান। ১১ রানের জয়ে তারা নিশ্চিত করল শিরোপা লড়াই। আগামী রবিবার এশিয়ার সবচেয়ে আলোচিত ক্রিকেট দ্বৈরথ—ভারত-পাকিস্তান ফাইনালে মুখোমুখি হবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী।
বাংলাদেশের সামনে তখনও সম্ভাবনা ছিল। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৩ রান। ক্রিজে ছিলেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম ও তরুণ রিশাদ হোসেন। প্রথম বলে রান নিতে গিয়ে মুশফিক মাত্র সিঙ্গেল নেন এবং স্ট্রাইক দেন রিশাদকে। পরের বলেই পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ হারিসকে ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচে রোমাঞ্চ ফিরিয়ে আনেন তিনি। তবে পরের বলে রান নিতে ব্যর্থ হন। চতুর্থ বলে আরেকটি বিশাল ছক্কায় ম্যাচের সমীকরণ খানিকটা সহজ করেন রিশাদ। শেষ দুই বলে প্রয়োজন ছিল ১২ রান, কিন্তু কোনো রানই নিতে পারেননি। ফলে হতাশার হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় বাংলাদেশকে।
বাংলাদেশের পরাজয়ের মূল কারণ ব্যাটিং ব্যর্থতা। মাত্র ১৩৬ রানের লক্ষ্য ছিল, যা বর্তমান টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে খুব বড় কিছু নয়। কিন্তু শুরু থেকেই ব্যাটাররা একে একে ফিরে যান ড্রেসিংরুমে। প্রথম ওভারেই শাহিন শাহ আফ্রিদির ভেতরের সুইংয়ে শিকার হন ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন। দলের রান তখন মাত্র ১।
এরপর কিছুটা প্রতিরোধ গড়েন সাইফ হাসান। তবে তিনিও ১৮ রানের বেশি যেতে পারেননি। জাকের আলি অনিক, শামীম হোসেন পাটোয়ারি—সবার ব্যাট থেকে এসেছে অবিবেচনাপ্রসূত শট। শামীম যদিও কিছুটা আশার আলো দেখিয়েছিলেন। ব্যক্তিগত ৩০ রান করে তিনি যখন রিভার্স সুইপে আউট হলেন, তখনও ম্যাচটা হাতের বাইরে যায়নি। কারণ তখন প্রয়োজন ছিল ২০ বলে ৩৯ রান।
কিন্তু সেই অবস্থাতেই ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের আশা। তানজিম হাসান সাকিব (১১) ও তাসকিন আহমেদকে তুলে নেন হারিস রউফ। পায়ে টান পাওয়ার পরও দারুণ স্পেল করেন তিনি। শেষ দিকে রিশাদ ১৬ রানের ইনিংস খেলে হারের ব্যবধান কমালেও তা জয় এনে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল না।
বাংলাদেশি বোলারদের পারফরম্যান্স অবশ্য প্রশংসনীয়। পাকিস্তানকে মাত্র ১৩৫ রানে থামাতে সক্ষম হন তারা। তাসকিন আহমেদ ছিলেন দুর্দান্ত। তিনি ৪ ওভারে ৩ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের টপ অর্ডারকে ধসিয়ে দেন। রিশাদ হোসেন ও শেখ মেহেদীও নিয়েছেন ২টি করে উইকেট।
একসময় পাকিস্তান ১০০ রান ছুঁতে পারবে কি না, তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছিল। কিন্তু জীবন পাওয়া ব্যাটাররা সেই পরিস্থিতি সামাল দেন। শাহিন শাহ আফ্রিদি মাত্র ১ ও ৩ রানে দুটি জীবন পান। পরে তিনি খেলেন গুরুত্বপূর্ণ ১৯ রানের ইনিংস, যেখানে ছিল ২টি ছক্কা। শূন্য রানে জীবন পাওয়া মোহাম্মদ নওয়াজও অবদান রাখেন ২৫ রানে, যার মধ্যে ছিল ২ ছক্কা ও ১ চার। সর্বোচ্চ ৩১ রান করেন মোহাম্মদ হারিস।
পাকিস্তানের জয়ের নায়ক ছিলেন তাদের দুই পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি ও হারিস রউফ। দুজনেই ৩টি করে উইকেট নেন। বিশেষ করে আফ্রিদির আগ্রাসী স্পেলই শুরুতে বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয়। তার ধারাবাহিক আক্রমণে কোনোভাবেই স্বস্তি পায়নি ব্যাটাররা।
বাংলাদেশ হেরে যাওয়ায় এবার রোববার ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল নিশ্চিত হলো। ক্রিকেট দুনিয়ার সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা আবারও মঞ্চস্থ হবে। একদিকে ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ, অন্যদিকে পাকিস্তানের বিধ্বংসী পেস আক্রমণ—এ লড়াই যে কতটা রোমাঞ্চ ছড়াবে, তা সহজেই অনুমেয়।
বাংলাদেশের জন্য অবশ্য শেখার মতো অনেক কিছু রয়ে গেল এই ম্যাচে। বিশেষ করে ব্যাটিং ব্যর্থতা কাটিয়ে ওঠার বিষয়টি ভাবতে হবে টিম ম্যানেজমেন্টকে। ভালো বোলিং করেও ম্যাচ জেতা যায়নি, কারণ ব্যাট হাতে কেউ দায়িত্ব নিতে পারেননি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ