
ছবি: সংগৃহীত
দুবাইয়ের আলোকোজ্জ্বল স্টেডিয়ামে ভারতীয় ক্রিকেটার অভিষেক শর্মার ব্যাটিং ঝড়ে দিশেহারা হলো বাংলাদেশ। রান তাড়ায় নেমে শেষ পর্যন্ত লড়াই করলেন সাইফ হাসান, খেললেন এক সাহসী অর্ধশতক, কিন্তু তার ইনিংস কেবল পরাজয়ের ব্যবধান কমাল। ভারতের কাছে ৪১ রানের পরাজয় বরণ করে নিতে হলো বাংলাদেশকে। এর ফলে সুপার ফোরে শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে লড়াইটা হয়ে দাঁড়ালো ‘অঘোষিত সেমিফাইনাল’। আগামীকালকের ম্যাচে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে যে দল জয় পাবে, তারাই ফাইনালে মুখোমুখি হবে ইতিমধ্যেই শিরোপা নিশ্চিত করা ভারতীয়দের সঙ্গে।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ভারত শুরুটা করেছিলেন যথেষ্ট সতর্কভাবে। প্রথম তিন ওভারে রান উঠেছিল মাত্র ১৭। কিন্তু এরপরই ম্যাচের চিত্র পাল্টে দেন বাঁহাতি ওপেনার অভিষেক শর্মা। তার দাপুটে ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লের ছয় ওভার শেষে ভারতের সংগ্রহ দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ৭২। অভিষেককে সঙ্গ দেন শুবমান গিল। ওপেনিং জুটিতে মাত্র ৩৮ বলে দুজন মিলে তোলেন ৭৭ রান।
গিল ২৯ রান করে আউট হলেও অভিষেক তার ইনিংসকে নিয়ে যান অন্য উচ্চতায়। মাত্র ৩৭ বল খেলে ৭৫ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন তিনি। তার স্ট্রাইক রেট ছিল ২০২.৭০, যা সংক্ষিপ্ত সংস্করণের ক্রিকেটে সত্যিই এক ভয়ঙ্কর ইনিংস। ৫টি ছক্কা আর ৬টি চার দিয়ে সাজানো তার ইনিংস ম্যাচের রূপ পাল্টে দেয়। অবশ্য ইনিংসের শুরুতে তিনি ভাগ্যবান ছিলেন। মাত্র ৭ রানে ক্যাচ দিয়েছিলেন উইকেটকিপার জাকের আলি অনিকের হাতে, কিন্তু সেটি হাতছাড়া হয়। সেই ভুলের খেসারত দিতে হয় বাংলাদেশকে।
অন্যদিকে লেগস্পিনার রিশাদ হোসেন দারুণ বোলিং করে কিছুটা হলেও ভারতীয় ব্যাটিংকে চাপে ফেলেন। গিল ও শিবম দুবেকে ফেরানোর পর ভারতের রানের গতি খানিকটা থামে। শেষ পর্যন্ত তিনি নেন দলের সর্বোচ্চ ২ উইকেট।
ভারত প্রথম ১০ ওভারে তুলেছিল ৯৬ রান, কিন্তু শেষ ১০ ওভারে তারা যোগ করতে পেরেছে মাত্র ৭২। বাংলাদেশি বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ভারতের ইনিংস থেমে যায় ১৬৯ রানে। হার্দিক পান্ডিয়ার ৩৮ রানের ইনিংস ভারতের পক্ষে শেষদিকে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। তবে ম্যাচের ফলাফলে আসল পার্থক্য গড়ে দেন অভিষেক শর্মা।
১৬৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ শুরুতেই ধাক্কা খায়। দলীয় ৪ রানের মাথায় ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম আউট হয়ে ফেরেন মাত্র ১ রান করে। এরপর সাইফ হাসান ও পারভেজ হোসেন ইমন মিলে ৪২ রানের জুটি গড়ে কিছুটা আশা জাগালেও পাওয়ার প্লে শেষে ইমন বিদায় নিলে আবার ভাঙতে শুরু করে ব্যাটিং লাইনআপ।
মাঝে মাঝে কেউ কেউ টিকে থেকেছেন, কিন্তু কেউই দুই অঙ্কের বেশি করতে পারেননি। দলের ব্যাটিং ভরাডুবির মধ্যে একপ্রান্ত আগলে রেখে লড়াই চালিয়ে যান সাইফ হাসান। ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন ইনিংস, পৌঁছান অর্ধশতকে। কিন্তু সঙ্গীর অভাবে তার চেষ্টা কেবল পরাজয়ের ব্যবধান কমানোয় সীমাবদ্ধ থাকে। শেষ পর্যন্ত তিনি আউট হন ৬৯ রানে। ৫টি ছক্কা ও ৩টি চারে সাজানো তার ইনিংস অবশ্য দলের হয়ে সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশি ব্যাটারদের জন্য সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিলেন ভারতীয় স্পিনার কুলদীপ যাদব। বল হাতে ভেলকি দেখিয়ে ৩টি উইকেট তুলে নেন তিনি। তার নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের কাছে বারবার ব্যাটাররা ভুল শট খেলতে বাধ্য হন।
শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ১২৭ রানে অলআউট হয়ে যায়। ফলে ৪১ রানের হারে ফাইনালে ওঠার আশা আপাতত স্থগিত থাকে।
এই হারের ফলে সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের লড়াই হয়ে উঠেছে ‘অঘোষিত সেমিফাইনাল’। আগামীকালকের ম্যাচে জয়ী দল ফাইনালে ভারতকে চ্যালেঞ্জ জানাবে। অন্যদিকে হার মানে বিদায়। তাই বাংলাদেশের সামনে এখন একটাই সমীকরণ—জিততেই হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ