
ছবি: সংগৃহীত
২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি নিয়ে চলমান প্রক্রিয়ার শেষ ধাপ শুরু হয়েছে। যারা এখনো কোনো কলেজে ভর্তি হতে পারেনি কিংবা পূর্ববর্তী ধাপে আবেদন করেও সুযোগ পায়নি, তাদের জন্য এ ধাপটি হতে যাচ্ছে চূড়ান্ত সুযোগ। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া এই আবেদন প্রক্রিয়া চলবে সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টা পর্যন্ত। এর পর আর কোনো শিক্ষার্থীর জন্য নতুনভাবে আবেদন বা ভর্তি হওয়ার সুযোগ রাখা হয়নি।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি জানিয়েছে, এর আগে তিন ধাপে মোট ১০ লাখ ৬৬ হাজার ১৬৩ জন শিক্ষার্থী একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। তবে তবুও ৫ হাজার ২৪০ জন শিক্ষার্থী কলেজে ভর্তির সুযোগ পাননি। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই ভর্তিবঞ্চিতদের মধ্যে ২৯৫ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ অর্জন করেও এখনো কোনো কলেজে ভর্তি হতে পারেনি। তাদের কথা বিবেচনা করেই কর্তৃপক্ষ চতুর্থ ও শেষ ধাপের আবেদন কার্যক্রম চালু করেছে।
শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, এটি না হলে বহু মেধাবী শিক্ষার্থী বিপাকে পড়ত এবং তাদের শিক্ষাজীবনে অপ্রত্যাশিত বিঘ্ন ঘটত। তাই এ ধাপকে অনেকে বলছেন “উদ্ধারক ধাপ।”
শেষ ধাপে আবেদনকারীদের ফল প্রকাশ করা হবে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর রাত ৮টায়। যারা নির্বাচিত হবে, তাদের অবশ্যই নির্ধারিত সময়ে কলেজ নিশ্চায়ন করতে হবে। নিশ্চায়ন প্রক্রিয়া চলবে ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর রাত ৮টা পর্যন্ত।
যেসব শিক্ষার্থী নিশ্চায়ন সম্পন্ন করবে, তাদের ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কলেজে ভর্তি হতে হবে। নির্ধারিত সময়ের পর আর ভর্তি হওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে— এ সময়সীমা অতিক্রম করলে আর কোনো ব্যতিক্রম রাখা হবে না।
চতুর্থ ধাপের শিক্ষার্থীদের আবেদন করতে হবে নির্ধারিত ওয়েবসাইটে (www.xiclassadmission.gov.bd)। ওয়েবসাইটে বিস্তারিত নির্দেশিকা দেওয়া আছে, যা অনুসরণ করতে হবে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।
প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে সর্বনিম্ন ৫টি এবং সর্বোচ্চ ১০টি কলেজ বেছে নিয়ে আবেদন করতে হবে। তবে এজন্য আগে অবশ্যই কলেজগুলোর আসন সংখ্যা সম্পর্কে ধারণা নেওয়া জরুরি। ভর্তিচ্ছুদের জন্য ওয়েবসাইটে কলেজভিত্তিক আসন সংখ্যার তথ্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
শেষ ধাপে আবেদন করার সুযোগ পাবেন—
-
যারা আগে কোনো ধাপে আবেদন করেনি,
-
যারা আবেদন করেও কলেজে নির্বাচিত হয়নি,
-
যারা মনোনয়ন পেয়েও নির্ধারিত সময়ে নিশ্চায়ন করেনি,
-
যারা মনোনয়ন পেয়েও নির্ধারিত সময়ে ভর্তি হয়নি।
অর্থাৎ, এই ধাপটি মূলত তাদের জন্য যাদের শিক্ষাজীবন আগের ধাপগুলোতে বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
ভর্তি প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছু জটিলতা ও অভিযোগও দেখা দিয়েছে। অনেকে অভিযোগ করেছেন, কোটার অপব্যবহার ও ভুয়া আবেদন বেড়ে যাওয়ায় অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী বঞ্চিত হয়েছে। এমনকি কিছু জনপ্রিয় কলেজে আসনের তুলনায় অতিরিক্ত আবেদন হওয়ায় আসল মেধাবীদের বাদ পড়ার ঘটনাও ঘটেছে।
এ বিষয়ে ভর্তি কমিটি জানিয়েছে, ভুয়া আবেদন ঠেকাতে তারা কড়া নজরদারি করছে। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের অনুরোধ জানানো হয়েছে যেন তারা সতর্কতার সঙ্গে কলেজ নির্বাচন করে এবং আবেদন করার সময় সব তথ্য সঠিকভাবে প্রদান করে।
ঢাকার একটি নামকরা কলেজে আবেদন করা এক শিক্ষার্থী জানান, “আমরা আগের ধাপেই ভর্তি হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মনোনয়ন পাওয়া কলেজটি পছন্দ না হওয়ায় ভর্তি হয়নি। এখন এই শেষ ধাপে আমাদের নতুন সুযোগ দেওয়া হলো। আশা করি এবার আমরা পছন্দের কলেজে ভর্তির সুযোগ পাব।”
একজন অভিভাবক বলেন, “আমার ছেলে জিপিএ-৫ পেয়েও এখনো কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়নি। এ বিষয়টি আমাদের জন্য দুশ্চিন্তার ছিল। এখন চূড়ান্ত ধাপে আবেদন করতে পারায় স্বস্তি পেলাম।”
শিক্ষাবিদরা বলছেন, ভর্তি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা জরুরি। বিশেষ করে প্রযুক্তিনির্ভর আবেদন প্রক্রিয়ায় অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক বিভ্রান্ত হন। তাই তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সঠিক সহায়তা ও হেল্পডেস্ক আরও কার্যকর করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
তারা আরও মনে করিয়ে দেন, ভর্তি প্রক্রিয়া কেবল আসন পূরণ নয়; বরং এটি একটি শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে। তাই দায়িত্বশীলভাবে ও তাড়াহুড়ো ছাড়া প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা উচিত।
এবারের ভর্তি প্রক্রিয়ায় যেভাবে একাধিক ধাপে সুযোগ দেওয়া হলো, তা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি ইতিবাচক উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে চূড়ান্ত ধাপ শেষে যেন কোনো শিক্ষার্থী বাইরে না থাকে, সেদিকে কঠোর নজর রাখতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।
শিক্ষার্থীদেরও অনুরোধ জানানো হয়েছে, তারা যেন সময়মতো আবেদন করে, নির্বাচিত হলে নিশ্চায়ন ও ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। কারণ ২৯ সেপ্টেম্বরের পর একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার আর কোনো সুযোগ থাকবে না।
বাংলাবার্তা/এমএইচ