
ছবি: সংগৃহীত
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পদে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমানকে হঠাৎ করেই সেই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে বদলি করা হয়েছে। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন মো. রুহুল আমীন, যিনি এর আগে পরিকল্পনা কমিশনে বিশেষ দায়িত্বে কর্মরত ছিলেন। নতুন দায়িত্বে তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (সচিব) হিসেবে যোগ দেবেন।
রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন নিয়োগ-১ শাখা থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ রফিকুল হক। এতে বলা হয়েছে, জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
প্রজ্ঞাপনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়, “জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।” অর্থাৎ মোখলেস উর রহমান এখন থেকে আর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কোনো কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন না। তার নতুন কর্মস্থল হবে পরিকল্পনা কমিশন, যেখানে তিনি একজন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
মো. রুহুল আমীন পূর্বে পরিকল্পনা কমিশনে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাকে হঠাৎ করেই দেশের অন্যতম প্রভাবশালী মন্ত্রণালয় জনপ্রশাসনের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে আনা হলো। এ পদে তিনি কার্যত সচিবের দায়িত্বই পালন করবেন। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ এই কর্মকর্তা নতুন দায়িত্বে কী ধরনের পরিবর্তন আনবেন, তা এখন সবার নজরে।
মোখলেস উর রহমান বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৯৮২ ব্যাচের কর্মকর্তা। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশেষ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে তিনি প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
২০২৪ সালের আগস্টে, জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থান ও তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর নতুন প্রশাসনিক বিন্যাসে তাকে জনপ্রশাসন সচিব করা হয়েছিল। অর্থাৎ দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোর একটি পরিচালনার দায়িত্ব তার কাঁধে অর্পণ করা হয়েছিল। তবে মাত্র এক বছরের মাথায় তিনি সেই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। এখানে সচিব পদে বদলি মানেই সরকারের প্রশাসনিক কৌশলে পরিবর্তনের ইঙ্গিত। মোখলেস উর রহমানকে সরিয়ে দেওয়ার কারণ প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়নি। তবে প্রশাসনিক মহলে ধারণা করা হচ্ছে, সরকারের নীতি ও অগ্রাধিকার বাস্তবায়নে নতুন নেতৃত্ব আনার প্রয়োজনীয়তা থেকেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন, জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে প্রশাসনে যেসব রদবদল হচ্ছে, এটি তারই ধারাবাহিকতা। নতুন সরকারের কাঠামোয় এখনো স্থিতিশীলতা পুরোপুরি আসেনি। তাই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোতে নতুন মুখ বসিয়ে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ জোরদার করতে চাইছে সরকার।
এ ধরনের আকস্মিক বদলি সাধারণত প্রশাসনের ভেতরে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। কর্মকর্তাদের একাংশ মনে করছেন, মোখলেস উর রহমান অভিজ্ঞ ও দক্ষ একজন আমলা হলেও রাজনৈতিক ও নীতিগত কারণে তাকে সরে যেতে হয়েছে। অন্যদিকে অনেকে বলছেন, দীর্ঘ কর্মজীবনের শেষ সময়ে পরিকল্পনা কমিশনের মতো নীতি-নির্ধারণী প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পাওয়া তার জন্য মর্যাদাপূর্ণ একটি নিয়োগ।
এখন মূল প্রশ্ন হলো, নতুন সচিব মো. রুহুল আমীন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে এসে কী ধরনের পরিবর্তন আনবেন। প্রশাসনকে আরও কার্যকর ও জনমুখী করার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা কতটা সফল হবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট—এ পরিবর্তন সরকারের প্রশাসনিক অঙ্গনে নতুন বার্তা বহন করছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ