
ছবি: সংগৃহীত
শেখ হাসিনা সরকারের শেষ মেয়াদে দ্বাদশ সংসদ সদস্যদের জন্য আমদানি করা বিলাসবহুল গাড়িগুলো নিয়ে দীর্ঘ টানাপোড়েনের অবসান ঘটল। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এসব গাড়ি আর নিলামে বিক্রি না করে সরাসরি সরকারের পরিবহন পুলে হস্তান্তর করা হবে। মোট ৩০টি গাড়ি সরকারের মালিকানায় চলে যাচ্ছে, যা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবহন ব্যবস্থাপনায় যুক্ত হবে এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কাজে ব্যবহৃত হবে।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম বন্দর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। তিনি বলেন, সাবেক সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা এসব গাড়ি বিক্রির জন্য একাধিকবার নিলামের উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাজারে প্রত্যাশিত দর পাওয়া যায়নি। ফলে জাতীয় স্বার্থে এগুলো সরকারের কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা দেখেছি, যখন নিলামে গাড়িগুলো তোলা হয়, তখন খুবই কম দর এসেছে। অনেক গাড়ির জন্য তো কোনো দরই জমা পড়েনি। অথচ সংরক্ষিত মূল্য ছিল অনেক বেশি। এমন পরিস্থিতিতে যদি সরকার আবার এগুলো কিনতে যায়, তাহলে সরকারি কোষাগার থেকেই বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হবে। তাই নিলামে বিক্রি না করে সরকারের পরিবহন পুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাতে এগুলো সরাসরি সরকারি কাজে ব্যবহার করা যায়।”
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তৎকালীন সংসদ সদস্যরা শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় মোট ৫১টি গাড়ি আমদানি করেছিলেন। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ার পর গত বছরের ৬ আগস্ট সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে সাবেক সংসদ সদস্যদের দেওয়া শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল করে এনবিআর। ফলে যারা গাড়ি আমদানি করেছিলেন, তাদের অনেকেই সেগুলো আর বন্দর থেকে ছাড়াননি।
সাবেক এমপিদের আনা ৫১টি গাড়ির মধ্যে মাত্র সাতটি আগেভাগেই ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। বাকি গাড়িগুলোর মধ্যে ২৪টি গত ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রাম কাস্টমস প্রথমবার নিলামে তোলে। নিলামে গাড়ি ভেদে সর্বোচ্চ দর প্রস্তাব করা হয়েছিল ১ লাখ টাকা থেকে ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু নিলামে নির্ধারিত সংরক্ষিত মূল্য ছিল প্রতিটি গাড়ির জন্য প্রায় ৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এত বিশাল পার্থক্যের কারণে কোনো গাড়িই বিক্রি হয়নি। এমনকি ১০টি গাড়ির জন্য কোনো দরদাতাই এগিয়ে আসেননি।
এই পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এনবিআর মনে করে, যদি গাড়িগুলো বারবার নিলামে তুলেও বিক্রি না হয়, তাহলে সময় ও প্রশাসনিক ব্যয় বাড়বে। আবার অল্প দামে বিক্রি করলে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাছাড়া যদি সরকারকে পরে আবার বাজার থেকে গাড়ি কিনতে হয়, তবে অনেক বেশি অর্থ ব্যয় করতে হবে। সেই তুলনায় সরাসরি পরিবহন পুলে যুক্ত হলে সরকার বিনা খরচে এগুলো ব্যবহার করতে পারবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান আরও জানান, এসব গাড়ি মূলত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিবহন পুলে যাবে। এরপর সেখান থেকে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী গাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হবে। তিনি বলেন, “আমরা চাইনি রাষ্ট্রের সম্পদ অপচয় হোক। তাই এগুলো সরকারের কাজে লাগবে। এর মাধ্যমে গাড়িগুলোও সংরক্ষিত থাকবে, আর সরকারি ব্যয়ও বাঁচবে।”
এই বিলাসবহুল গাড়িগুলো নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ জনমনে ব্যাপক আলোচনা চলছিল। সাবেক এমপিদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আনার বিষয়টি সবসময়ই বিতর্কিত হিসেবে দেখা হয়। সাধারণত এসব গাড়ি বাজারে বিক্রি করে বিপুল অর্থ লাভের চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ায় এবার ভিন্ন চিত্র দেখা গেল। গাড়িগুলো সরাসরি সরকারি মালিকানায় চলে যাওয়ায় অনেকেই এটিকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যদি সরকার গাড়িগুলো কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে, তবে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় রোধ হবে। অন্যদিকে, পুনরায় বাজার থেকে গাড়ি কিনতে হলে যে বাড়তি ব্যয় হতো, সেটিও এড়ানো যাবে।
মোট ৩০টি গাড়ি সরকারের পরিবহন পুলে যুক্ত হওয়ায় এখন সেগুলো মন্ত্রী, সচিব বা বিভিন্ন দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহার হবে। এতে সরকারের পরিবহন খাত কিছুটা হলেও শক্তিশালী হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এনবিআরের এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই সময়োপযোগী ও বাস্তবসম্মত বলছেন।
বাংলাবার্তা/এসজে