
ছবি: সংগৃহীত
শারদীয় দুর্গাপূজা সামনে রেখে সারাদেশে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সরকার। আগামী বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে নামবেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। পূজা উদ্যাপন যেন শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও ধর্মীয় সম্প্রীতির পরিবেশে হয়, সে লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। সভায় দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি, পূজাকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য হুমকি এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, পূজার সময় নিরাপত্তা জোরদারের অংশ হিসেবে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ৮০ হাজার স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ দেওয়া হবে। এই স্বেচ্ছাসেবীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি মাঠে কাজ করবেন। তারা পূজা মণ্ডপে ভিড় নিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খলা রক্ষা এবং জরুরি পরিস্থিতিতে সহায়তার দায়িত্ব পালন করবেন।
“পূজা একটি ধর্মীয় পবিত্র অনুষ্ঠান। তাই আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, যেন কোনো ধরনের অঘটন না ঘটে। স্বেচ্ছাসেবক ও নিরাপত্তা বাহিনীর সমন্বিত প্রচেষ্টায় পূজা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে,” বলেন উপদেষ্টা।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এবার প্রতিমা ভাঙচুরের সংখ্যা অনেক কম। যেসব এলাকায় এমন ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোও সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে শনাক্ত করা হচ্ছে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আশ্বাস দেন, সরকার সব ধরনের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।
২৪ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে দুর্গাপূজা চলাকালীন প্রতিটি জেলায়, থানায় এবং পূজা মণ্ডপে পুলিশ, র্যাব, আনসারসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন থাকবেন। পাশাপাশি বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল, ডগ স্কোয়াড এবং গোয়েন্দা নজরদারিও থাকবে। সিসিটিভি ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে পূজা মণ্ডপগুলো সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।
পূজার নিরাপত্তা প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী দেশের মাদক পরিস্থিতি নিয়েও সতর্কবার্তা দেন। তিনি বলেন, “বিভিন্ন রুট দিয়ে দেশে মাদক প্রবেশ করছে। তবে একই সঙ্গে দেখা যাচ্ছে, দেশের চাল, সার ও ওষুধও পাচার হয়ে যাচ্ছে। শুধু কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম রুটেই নয়, বরিশাল ও বরগুনার সমুদ্রসংলগ্ন নৌপথেও এই পাচার চলছে।”
তার মতে, এই পাচারচক্রের পেছনে আন্তর্জাতিক অপরাধী নেটওয়ার্ক সক্রিয়। বিশেষ করে আরাকান আর্মি মাদক ব্যবসার ওপর নির্ভর করেই টিকে আছে। “বর্তমানে বিপুল পরিমাণে মাদক ধরা পড়ছে। এজন্য বাজারে মাদকের দাম বেড়ে গেছে। এটি প্রমাণ করে, আমাদের অভিযান কার্যকর হচ্ছে।”
সভার আলোচনায় তিনি কৃষি ও পণ্যের বাজার পরিস্থিতি নিয়েও মন্তব্য করেন। জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “সারা দেশে কৃষকরা আলুর দাম পাচ্ছেন না। কৃষকরা যদি নায্যমূল্য না পান, তাহলে তারা আগামী মৌসুমে আলু চাষ থেকে সরে আসবেন। এতে ভবিষ্যতে আলুর ঘাটতি তৈরি হতে পারে, আর তখন বাজারে আলুর দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাবে।”
তার মতে, কৃষি উৎপাদন, কৃষকের নায্যমূল্য নিশ্চিত করা এবং কৃষি বাজার নিয়ন্ত্রণও আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। যদি কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন, তবে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে।
সভার শেষ দিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সবাইকে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসব নয়, এটি আসলে সবার উৎসব। আমরা চাই—সব ধর্মের মানুষ মিলেমিশে উৎসব উদ্যাপন করুক। এটাই হবে আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন।”
বাংলাবার্তা/এমএইচ