
ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও নিজের কৃতিত্ব তুলে ধরে আলোচনায় এসেছেন। তিনি দাবি করেছেন, তাঁর সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় বিশ্বের সাতটি বড় যুদ্ধ থেমে গেছে। সেই সাফল্যের ভিত্তিতে তাঁর অন্তত সাতটি নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া উচিত। শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) আমেরিকান কর্নারস্টোন ইনস্টিটিউটের আয়োজিত ফাউন্ডার্স ডিনারে ভাষণ দিতে গিয়ে ট্রাম্প এ মন্তব্য করেন।
ট্রাম্পের বক্তব্যে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক বিশেষভাবে উঠে আসে। তিনি বলেন, “ভাবুন তো ভারত ও পাকিস্তানের কথা। আমি কীভাবে সেটা থামালাম জানেন? বাণিজ্যের মাধ্যমে। তারা বাণিজ্য করতে চায়। আমি দুই দেশের নেতাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রাখি। কিন্তু যুদ্ধ থামানোর জন্য আমরা এই পথই নিয়েছি।”
তিনি দাবি করেন, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা যখন বাড়ছিল, তখন তিনি দুই দেশকেই স্পষ্ট করে জানিয়েছিলেন— যদি তারা সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে, তবে বাণিজ্য সম্পর্ক বন্ধ হয়ে যাবে। তাঁর ভাষায়, “তোমাদের তো পারমাণবিক অস্ত্রও আছে। তারপরও তোমরা যদি যুদ্ধ করো, তাহলে বাণিজ্য হবে না।” এই সতর্কবার্তার পরই পরিস্থিতি শান্ত হয় বলে মনে করেন তিনি।
ট্রাম্প শুধু ভারত-পাকিস্তান নয়, আরও কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংঘাতের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তাঁর দাবি অনুযায়ী, তাঁর কূটনৈতিক উদ্যোগে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া, আর্মেনিয়া-আজারবাইজান, কসোভো-সার্বিয়া, ইসরায়েল-ইরান, মিশর-ইথিওপিয়া এবং রুয়ান্ডা-কঙ্গো—মোট সাতটি সংঘাত প্রশমিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এই যুদ্ধগুলো থামানোর মধ্যে ৬০ শতাংশই সম্ভব হয়েছে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক চাপে। অর্থাৎ, কেবল সামরিক শক্তি বা কূটনৈতিক বক্তব্য নয়, বরং অর্থনৈতিক স্বার্থকে কাজে লাগিয়েই সংঘাতগুলো থামানো গেছে।
ট্রাম্প বলেন, “বিশ্ব মঞ্চে আমরা এখন এমন কাজ করছি, যা আগে কখনো হয়নি। আমরা শান্তি চুক্তি করছি, যুদ্ধ বন্ধ করছি। এগুলো আমাদের সময়ের সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক অর্জন।” তাঁর ভাষায়, বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ বন্ধে তাঁর প্রশাসন ঐতিহাসিক অবদান রেখেছে, যা নোবেল শান্তি পুরস্কারে স্বীকৃতি পাওয়ার মতো।
তিনি এমনকি ব্যঙ্গ করে বলেন, “আমি সাতটা যুদ্ধ থামিয়েছি। প্রতিটির জন্য আলাদা নোবেল পাওয়া উচিত। আমাকে একটিতে সীমাবদ্ধ করা ঠিক হবে না।”
ট্রাম্পের বক্তব্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধও আসে। তিনি দাবি করেন, যদি তিনি ক্ষমতায় থাকতেন, তাহলে এ সংঘাত এতদূর গড়াত না। বরং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তাঁর ভালো সম্পর্ক ব্যবহার করে দ্রুত যুদ্ধ থামানো যেত।
যদিও তিনি স্বীকার করেন, পুতিনের সাম্প্রতিক আচরণ তাঁকে হতাশ করেছে। তারপরও তিনি মনে করেন, নিজের কূটনৈতিক দক্ষতা দিয়ে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতও শেষ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব।
ট্রাম্পের এ ধরনের বক্তব্য নতুন নয়। এর আগে তিনি বারবার দাবি করেছেন, তাঁর সময়ে বিশ্ব নিরাপদ ছিল এবং যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে শক্ত অবস্থানে ছিল। তবে সমালোচকরা মনে করেন, তাঁর বক্তব্য অনেকাংশে অতিরঞ্জিত এবং বাস্তবতার সঙ্গে সবসময় মেলে না।
ভারত-পাকিস্তানের মতো জটিল সংঘাত, যা দশকের পর দশক ধরে উত্তেজনার মধ্য দিয়ে গেছে, তা কেবল ট্রাম্পের ফোন কল বা বাণিজ্য চাপেই থেমে গেছে—এমন দাবি বিশেষজ্ঞদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য নয়। তবে ট্রাম্পের সমর্থকরা তাঁর এ বক্তব্যকে তাঁর কূটনৈতিক সাফল্যের বড় উদাহরণ হিসেবে দেখছেন।
উল্লেখ্য, ট্রাম্প অতীতে একাধিকবার নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, তাঁর প্রশাসন যখন মধ্যপ্রাচ্যে শান্তিচুক্তি করেছিল, তখন তাঁকে পুরস্কারের জন্য বিবেচনা করা হয়নি। অথচ তাঁর ভাষায়, অন্য নেতারা ছোটখাটো উদ্যোগ নিয়ে নোবেল পেয়েছেন।
তবে নোবেল কমিটি কখনোই প্রকাশ্যে ট্রাম্পের নাম বিবেচনায় আনার বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্য আবারও তাঁর রাজনৈতিক কৌশল ও ব্যক্তিত্বকে সামনে নিয়ে এসেছে। সমর্থকদের কাছে এটি তাঁর শক্তিশালী নেতৃত্ব ও বৈশ্বিক প্রভাবের প্রতীক। কিন্তু সমালোচকদের কাছে এটি কেবল নির্বাচনী রাজনীতিতে আলোচনায় থাকার কৌশল।
তবে একটি বিষয় স্পষ্ট— ট্রাম্প নিজেকে এখনও আন্তর্জাতিক শান্তি ও কূটনীতির কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করতে চান। এবং তাঁর দাবি, তিনি যুদ্ধ থামিয়েছেন, শান্তি এনেছেন—সেটি ভবিষ্যতেও তাঁর প্রচারে বড় হাতিয়ার হয়ে থাকবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ