
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে আলোচনা-সমালোচনা চলছে—বিদ্যমান নির্বাচন ব্যবস্থা বহাল থাকবে, নাকি প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতি চালু হবে। তবে এ বিষয়ে সরকারের কোনো আনুষ্ঠানিক অবস্থান নেই বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম। তার ভাষায়, নির্বাচন পদ্ধতি নির্ধারণের সিদ্ধান্ত সরকার নয়, বরং রাজনৈতিক দলগুলোর ওপরই বর্তাবে।
রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীতে গবেষণা সংস্থা ইনোভেশন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সংস্থাটি সাম্প্রতিক জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে, যেখানে জনগণের মতামত ও প্রত্যাশা উঠে এসেছে।
প্রেসসচিব শফিকুল আলম অনুষ্ঠানে বলেন, “পিআর হোক কিংবা বিদ্যমান পদ্ধতিতে নির্বাচন হোক, সিদ্ধান্ত নেবে রাজনৈতিক দলগুলো। সরকারকে এ বিষয়ে কম কথা বলাই শ্রেয়। কারণ, নির্বাচনের মূল মালিকানা রাজনৈতিক দল ও জনগণের হাতেই থাকা উচিত।”
তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক জরিপের পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে সরকারের ওপর জনগণের আস্থা রয়েছে। তার মতে, জনগণের আস্থা থাকলে নির্বাচন নিয়ে অযথা বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই।
শফিকুল আলম বলেন, “জরিপের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, ৯৫ শতাংশ মানুষ ভোট দিতে চান। এর মানে দাঁড়াচ্ছে, আসন্ন নির্বাচন হবে সত্যিকার অর্থে অন্তর্ভুক্তিমূলক (ইনক্লুসিভ)। যখন জনগণের এমন ব্যাপক আগ্রহ থাকে, তখন কোনো শক্তির পক্ষেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ করা সম্ভব নয়।”
তিনি যোগ করেন, “সবাই যখন ভোটকেন্দ্রে আসে, তখন স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচনের মান উন্নত হয়। ভোটের উৎসবটাই তখন গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে।”
ইনোভেশনের জরিপে জনগণের নানা মতামত উঠে এসেছে। জরিপে দেখা যায়:
-
দেশের ৫৬ শতাংশ মানুষ জানেনই না পিআর সিস্টেম কী।
-
২১ দশমিক ৮ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তারা পিআর পদ্ধতি চান।
-
২২ দশমিক ২ শতাংশ বলেছেন, তারা পিআর পদ্ধতি চান না।
জরিপে মোট অংশগ্রহণ করেছেন ১০ হাজার ৪১৩ জন উত্তরদাতা। এর মধ্যে বড় অংশই গ্রামাঞ্চল থেকে, পাশাপাশি শহর ও নগরের মানুষের মতামতও নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, উত্তরদাতাদের মধ্যে ৬৯ দশমিক ৯ শতাংশ মনে করেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে সক্ষম। এ ফলাফলকে ইতিবাচক বার্তা হিসেবেই দেখছে আয়োজকরা।
প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন বা পিআর পদ্ধতিতে প্রতিটি দলের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে সংসদে আসন বণ্টন করা হয়। ফলে ছোট দলগুলোও তাদের প্রকৃত ভোটের প্রতিফলন হিসেবে আসন পেতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত একক সদস্যভিত্তিক আসন পদ্ধতিতে (ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট) যে দল বা প্রার্থী বেশি ভোট পান, তিনি সরাসরি বিজয়ী হন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেক দিন ধরেই পিআর ব্যবস্থা নিয়ে বিতর্ক চলছে। কেউ মনে করেন এটি বহুদলীয় গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করবে, আবার কেউ মনে করেন এতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বাড়তে পারে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিবের বক্তব্যে পরিষ্কার হয়েছে যে, সরকার নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে কোনো একক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চাইছে না। বরং দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য গড়ে ওঠাটাকেই তারা অগ্রাধিকার দিচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি ইতিবাচক বার্তা।
তাদের মতে, বাংলাদেশে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলছে, তাই সরকারের নিরপেক্ষ অবস্থান রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনাকে আরও উৎসাহিত করবে। একই সঙ্গে জনগণের আস্থার প্রশ্নে জরিপের ফলাফল সরকারের জন্যও আশাব্যঞ্জক একটি বিষয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ