
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের জুয়া সম্পর্কিত আইন পরিবর্তনের বড় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকার পুরনো 'দ্য গ্যাম্বলিং অ্যাক্ট ১৮৬৭' বাতিল করে নতুন ‘জুয়া প্রতিরোধ অধ্যাদেশ-২০২৫’ প্রবর্তন করতে যাচ্ছে। এই নতুন অধ্যাদেশে শাস্তির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো হয়েছে, যার ফলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে শাস্তির পরিমাণ ২ হাজার গুণ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। নতুন অধ্যাদেশটি দেশে অনলাইন জুয়া ও অন্যান্য আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে, যা আগে পুরনো আইনে উল্লেখিত ছিল না।
বর্তমানে দেশের যেসব অনলাইন অ্যাপ এবং সাইটে জুয়া চলে, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে নতুন অধ্যাদেশটি তৈরি করা হয়েছে। অনলাইন জুয়া ও বেটিংয়ের অপরাধে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড, ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এটি প্রস্তাবিত পুরনো আইনের তুলনায় ব্যাপকভাবে কঠিন। ১৮৬৭ সালের আইনে অনলাইন জুয়া সম্পর্কিত কোনো বিধান ছিল না, যা এখন নতুন অধ্যাদেশে সন্নিবেশিত হয়েছে।
পুরনো আইনটি ছিল অপ্রাসঙ্গিক এবং অপর্যাপ্ত, কারণ তাতে জুয়ার শাস্তি ছিল খুবই সামান্য—সর্বোচ্চ ৬ মাস কারাদণ্ড বা ৬০০ টাকা জরিমানা। নতুন অধ্যাদেশে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ অপরাধের শাস্তি সংক্রান্ত কঠোর বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যেমন—অনলাইন জুয়া, পাতানো খেলা বা ম্যাচ ফিক্সিং, স্পট ফিক্সিং, হাউজি খেলা এবং লটারির অপরাধ।
নতুন অধ্যাদেশের খসড়া পর্যালোচনা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, দেশে অনলাইন জুয়া এক ধরনের সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। এই নতুন আইন বাস্তবায়িত হলে সরকারের হাতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা থাকবে, যাতে অপরাধীরা সহজেই মুক্তি না পেয়ে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও এসব অপরাধ মোকাবেলা করতে আরও কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারবে।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, দেশে জুয়া বা অনলাইন জুয়া সম্পর্কিত কোনো ওয়েবসাইট, অ্যাপ্লিকেশন বা প্ল্যাটফর্ম, এমনকি বিজ্ঞাপন ও প্রচারণাও নিষিদ্ধ করা যাবে। এই ধরনের প্ল্যাটফর্ম বা প্রকাশনা বন্ধ বা নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা দেওয়া হবে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অথবা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত কোনো কর্তৃপক্ষকে।
নতুন অধ্যাদেশে জুয়ার বিভিন্ন ধরনের অপরাধের জন্য শাস্তি দেওয়া হয়েছে, যেমন:
-
অনলাইন জুয়া: ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা।
-
পাতানো খেলা বা ম্যাচ ফিক্সিং: ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা।
-
বাজি ধরার অপরাধ: ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা।
-
লটারির অপরাধ: ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ২ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা।
এছাড়া, জুয়া আয়োজনকারী স্থানগুলোর মালিকদের জন্যও কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। তারা ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডের মুখে পড়তে পারেন। আইনজীবী ও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নতুন অধ্যাদেশের শাস্তি কার্যকর করতে হলে সরকারকে বিশেষ নজর দিতে হবে। তারা আরও বলেন, অনলাইন জুয়া ও অন্যান্য অপরাধ কার্যকরভাবে মনিটরিং করার জন্য সরকারকে একটি বিশেষ সেল তৈরি করা উচিত, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে অপরাধীদের শনাক্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবে।
এর আগে, একাধিক ফোরামে উঠে এসেছে যে, অনলাইন জুয়া এবং বেটিং চক্রে জড়িয়ে পড়ে দেশের অনেক মানুষ আর্থিকভাবে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। তবে নতুন অধ্যাদেশটি বাস্তবায়িত হলে এর বিস্তার এবং নিয়ন্ত্রণ কার্যকরভাবে করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ