
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সরকার কঠোর শৃঙ্খলা প্রয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। বিনা অনুমতিতে অফিসে অনুপস্থিতি, অফিস ত্যাগ এবং দেরিতে অফিসে উপস্থিতির ক্ষেত্রে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে সরকারি কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে দিয়েছেন। দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হিসেবে কাজ করা এনবিআরের মাঠ পর্যায়ের দপ্তরসমূহে এই ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গ সরকারের জন্য গ্রহণযোগ্য নয় এবং এতে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও রাজস্ব আদায় কার্যক্রম মারাত্মক প্রভাবিত হচ্ছে বলে বিবৃতি জানানো হয়েছে।
শুক্রবার রাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিস্তারিতভাবে এই কঠোর নির্দেশনা জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে চলমান আন্দোলনের কারণে দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র এবং রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজকর্মে জোরালো বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। জনগণ কাঙিক্ষত সেবা পাচ্ছে না, যা দপ্তরীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থি এবং সরকারি বিধি-বিধানের কঠোর লঙ্ঘন।’
এনবিআর জানিয়েছে, কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য সরকারি বিধি অনুযায়ী কোনো কর্মচারী বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে কিংবা অফিস ত্যাগ করলে বা সময়মতো উপস্থিত না হলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর প্রধানগণকে অফিস শৃঙ্খলা কঠোরভাবে নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ‘অর্থ বছরের শেষ তিনটি কর্মদিবসে ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি এবং রাজস্ব আদায়ের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীন কাস্টমস হাউস, কর কমিশনারেট, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের সকল কমিশনারদেরকে তাদের অধীনে থাকা দপ্তরসমূহে নিয়মিত উপস্থিত থেকে সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।’
সরকারি কর্মচারীদের অফিস ত্যাগ সংক্রান্ত প্রক্রিয়াও বিজ্ঞপ্তিতে পরিষ্কার করা হয়েছে। অফিস চলাকালীন কোনো প্রয়োজনে দপ্তর ত্যাগ করতে হলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর প্রধানের অনুমতি নিতে হবে এবং অফিস ত্যাগের রেজিস্টারে তার এন্ট্রি নিশ্চিত করতে হবে। এর মাধ্যমে শৃঙ্খলা বজায় রাখার পাশাপাশি দপ্তরের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা এবং দাপ্তরিক দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা হবে।
বর্তমানে এনবিআর কর্মচারীদের মধ্যে চলমান আন্দোলনের ফলে দেশের রাজস্ব আদায়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এতে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম হঠাৎ ব্যাহত হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া একটি জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এমন কঠোর অবস্থান মূলত দেশের অর্থনীতির ক্ষতি এড়াতে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় রাখতে সরকারের একান্ত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ বলে অভিহিত করা হচ্ছে। এনবিআরের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরসমূহে শৃঙ্খলা ও নিয়মিত সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
এনবিআরের এই পদক্ষেপ সরকারের প্রতিশ্রুতিরই অংশ, যেখানে তারা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং রাজস্ব আদায়ের হার বৃদ্ধির জন্য তৎপর রয়েছে। আগামী দিনে এনবিআরের কর্মচারীদের দপ্তর শৃঙ্খলা রক্ষায় সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহন, কর্মচারীদের মাঝে পেশাদারিত্ব বজায় রাখা এবং জনসেবা নিশ্চিত করাই সরকারের মূল উদ্দেশ্য হিসেবে রয়ে গেছে।
সাধারণ জনগণ ও ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, এনবিআরের কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চালু থাকায় তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাবে এবং দেশের অর্থনীতিতে নতুন প্রাণ সঞ্চারিত হবে। সেই সাথে এই সংকট দ্রুত শিথিল হয়ে দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাপনাও আরও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হবে।
বাংলাবার্তা/এসজে