
ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও সরাসরি ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক হামলার হুমকি দিয়েছেন। শুক্রবার (২৭ জুন) স্থানীয় সময় ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ইরান যদি উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রাখে এবং আন্তর্জাতিক পরিদর্শনের সুযোগ না দেয়, তাহলে ফের বোমা হামলার সিদ্ধান্তে কোনো রকম দ্বিধা থাকবে না।
গত ১৩ জুন ইসরাইল ইরানের অভ্যন্তরে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালায়। সেই ঘটনার জেরে টানা ১২ দিন দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলে, যা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে। অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ২৩ জুন সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইরান ও ইসরাইল। কিন্তু তারপরও উত্তেজনা প্রশমিত হয়নি। বরং এখন তা ছড়িয়ে পড়েছে কূটনৈতিক ও সামরিক হুমকির নতুন পর্যায়ে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেন, “আমরা চাই ইরানের সব পরমাণু স্থাপনাকে আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থা (IAEA) বা যুক্তরাষ্ট্রের নির্ভরযোগ্য পরিদর্শন সংস্থাগুলোর তদারকির আওতায় আনতে হবে। না হলে কোনো সমঝোতা, আলোচনায় যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।”
তিনি অভিযোগ করেন, ইরান গোপনে উচ্চমাত্রার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রেখেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করছে। এ ছাড়া তিনি জানান, ইরানকে আলোচনায় ফিরিয়ে আনার জন্য একটি প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় তিনি কাজ করছিলেন, যার আওতায় নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হতো। কিন্তু খামেনির “চরমপন্থী ও আক্রমণাত্মক বক্তব্য” শোনার পরপরই সেই পরিকল্পনা স্থগিত করা হয়েছে।
এদিকে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ হামলাকে “মুসলিম বিশ্বের জন্য একটি শিক্ষা” এবং “যুক্তরাষ্ট্রের মুখে চপেটাঘাত” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ট্রাম্প এই বক্তব্যকে “চরম অপমানজনক ও উসকানিমূলক” বলে উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্টে বলেন, “এ ধরনের বিদ্বেষপূর্ণ ও ঘৃণায় ভরা বক্তব্য আসার পর আলোচনার আর কোনো সুযোগ নেই। আমি সব আলোচনা বাতিল করেছি।”
ট্রাম্পের এই প্রতিক্রিয়ার ফলে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সম্পর্ক আবারও ২০১৯-২০ সালের উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে ফিরে যেতে পারে, যেখানে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে সামরিক সংঘর্ষ প্রায় নিশ্চিত হয়ে উঠেছিল।
ইসরাইল এই পরিস্থিতিতে সরাসরি সামরিক কৌশলগত পরিকল্পনায় চলে গেছে। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ সেনাবাহিনীকে “এনফোর্সমেন্ট প্ল্যান” নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সামরিক প্রস্তুতি পরিকল্পনা তৈরি করতে বলেছেন। এই পরিকল্পনার আওতায় থাকবে:
ইসরাইলি আকাশসীমার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা
ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ধ্বংস করার প্রস্তুতি
সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তা দেওয়ার অভিযোগে ইরানের বিরুদ্ধে ‘প্রত্যুত্তরমূলক’ অভিযান
কাৎজ বলেন, “যুদ্ধ শেষ হলেও ইরানের হুমকি শেষ হয়নি। আমাদের সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান-ইসরাইল সংঘাত ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তাকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। ইরান যদি সত্যিই আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন করে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে গতি বাড়ায়, তাহলে অঞ্চলটিতে আরেকটি বড় যুদ্ধের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অপরদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের কড়া অবস্থান ইরানকে আরও বিচ্ছিন্ন করে তুলবে এবং চীন ও রাশিয়ার দিকে ঠেলে দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ট্রাম্পের ইরানবিরোধী হুমকি কেবল কূটনৈতিক নয়, বরং সামরিক সিদ্ধান্তের আভাস দিচ্ছে। পারমাণবিক কর্মসূচি ও হামলার পাল্টা হুমকির এই পরিবেশ এক ভয়াবহ সংঘাতের দিকে গড়াতে পারে, যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দ্রুত কার্যকর কূটনৈতিক পদক্ষেপ না নেয়। যুক্তরাষ্ট্র, ইরান ও ইসরাইল—এই ত্রিমুখী উত্তেজনার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে রাজনৈতিক দায়িত্বশীলতা এবং আলোচনার পথ খোলা রাখার ওপর। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি তেমন কোনো ইঙ্গিত দিচ্ছে না।
বাংলাবার্তা/এমএইচ