
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের আকাশে ১৪৪৭ হিজরি সনের মহররম মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ায় আগামী ৬ জুলাই রোববার পবিত্র আশুরা পালিত হবে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। ধর্মীয় অনুষঙ্গ ও প্রশাসনিক সংগঠনগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সন্ধ্যায় ঢাকার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠকে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের সভাপতিত্বে এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। সভায় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এ কে এম আফতাব হোসেন প্রামাণিক, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) আব্দুস ছালাম খান, ওয়াকফ প্রশাসক মো. নূর-ই-আলম, তথ্য অধিদপ্তরের উপ-প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী সরকার, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন, ঢাকা জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পারভেজ চৌধুরী, বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ শহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি মহররম মাসের চাঁদ দেখার জন্য বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর, মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ সংশ্লিষ্ট সব সরকারি ও আধা সরকারি সংস্থাগুলোর প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে বৈঠকে পেশ করে।
চাঁদ দেখা সংক্রান্ত পর্যালোচনায় জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আগে এবং সন্ধ্যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে পবিত্র মহররম মাসের চাঁদ স্পষ্ট দেখা গেছে। ফলে আগামী শুক্রবার থেকে মহররম মাস গণনা শুরু হবে।
মহররম মাসের দশম দিন, অর্থাৎ আশুরা মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। এই দিনে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা:) এর পূর্বপুরুষ হযরত হোসাইন (রা:) কারবালার যুদ্ধে শহীদ হন। তাই আশুরা পালনে মুসলমান সমাজে গভীর আধ্যাত্মিক আবেগ ও অনুশীলনের প্রকাশ ঘটে।
আশুরা পালনের প্রস্তুতি নিয়ে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যেই বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। দেশজুড়ে বিভিন্ন মসজিদে বিশেষ নামাজ, দোয়া ও কোরআন তিলাওয়াতের আয়োজন করা হবে। এছাড়াও শোকসভা, মহাফিল, লেকচার ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম নেওয়া হবে।
আসন্ন পবিত্র আশুরা উপলক্ষে সরকারও জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। নিরাপত্তা বাহিনী মাঠে রয়েছে যাতে ধর্মীয় অনুষ্ঠান শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়। এছাড়াও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
পবিত্র আশুরা মুসলমানদের নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার এক অনন্য উৎস। কারবালার যুদ্ধ ও হযরত হোসাইনের শাহাদাতের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িকতা, অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের শিক্ষা মুসলিম সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। এই দিনটি স্মরণে রেখে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আলোচনা সভা, সেমিনার ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের আয়োজন হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের মুসলিম জনসাধারণও পবিত্র আশুরা পালনে ব্যাপক উৎসাহ প্রদর্শন করে থাকে। ধর্মীয় ঐক্য ও সহমর্মিতার প্রতীক হিসেবে এ দিনটি পালিত হয়। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এই উপলক্ষে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে যাতে ধর্মীয় মর্যাদা অক্ষুন্ন থাকে।
সরকার ও ধর্মীয় সংগঠনগুলো পবিত্র আশুরা পালনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেন, “মহানবীর আদর্শে চলতে হবে, শান্তি ও সৌহার্দ্য বজায় রাখতে হবে, এবং সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষা করতে হবে।”
এসবের মধ্য দিয়ে আগামী ৬ জুলাই বাংলাদেশে পবিত্র আশুরা পালিত হবে গভীর ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে, যা দেশের মুসলিম সমাজের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অপরিহার্য অংশ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ