
ছবি: সংগৃহীত
ইসলামের অন্যতম মহান সৌন্দর্য হলো—সহজ কিছু আমল দ্বারাও অশেষ সওয়াব অর্জন করা যায়। ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি নফল ইবাদত করতে গিয়ে অনেক সময় মানুষ ব্যস্ততার কারণে নিয়মিত থাকতে পারে না। তবে কিছু আমল রয়েছে, যা ছোট হলেও এর ফজিলত অনেক বড়। তেমনি একটি বিশেষ আমল হলো সুরা ইখলাস পাঠ করা। অল্প কয়েকটি আয়াতের এ সুরাটি কুরআন মাজিদের অন্যতম সংক্ষিপ্ত সুরা হলেও এর মর্যাদা ও ফজিলত অতুলনীয়।
সুরা ইখলাস মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এতে মোট চারটি আয়াত রয়েছে। কুরআনের সবচেয়ে ছোট সুরা হলো সুরা কাওসার, আর তার পরই রয়েছে সুরা ইখলাস। কিন্তু ছোট হলেও এর অর্থ ও তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর। এ সুরায় আল্লাহর একত্ববাদ ও তাঁর অনন্য সত্তার ঘোষণা করা হয়েছে। ইসলামের মূল ভিত্তিই হলো তাওহিদ, আর সুরা ইখলাস সেই তাওহিদের সারাংশ প্রকাশ করে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) অনেক হাদিসে এ সুরার গুরুত্ব ও ফজিলতের কথা উল্লেখ করেছেন। আবু দাউদ, তিরমিজি ও নাসায়ি শরীফে বর্ণিত রয়েছে, রাসূল (সা.) বলেছেন—যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় সুরা ইখলাসের সঙ্গে সুরা ফালাক ও সুরা নাস পাঠ করবে, আল্লাহ তাকে যাবতীয় বালা-মুসিবত থেকে রক্ষা করবেন। অর্থাৎ মানুষের জীবনের ছোট-বড় বিপদ থেকে মুক্ত থাকার এক মহৌষধ হলো এ তিন সুরা পাঠ।
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন ঘুমাতে যেতেন, তখন তাঁর দুই হাতের তালু একত্র করে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পড়ে তাতে ফুঁ দিতেন। এরপর সেই হাতের তালু শরীরের যেসব অংশে পৌঁছাতো, সেখানে বুলিয়ে দিতেন। তিনি এ কাজটি তিনবার করতেন। হাদিসটি বুখারি, আবু দাউদ ও তিরমিজি শরীফে উল্লেখিত। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, সুরা ইখলাস শুধু পড়লেই নয়, বরং আমলের মাধ্যমেও এক বিশেষ সুরক্ষা দান করে।
হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাতে বারবার সুরা ইখলাস পড়ছিলেন। অন্যরা বিষয়টি নবি করীম (সা.)কে জানালে তিনি বলেন, “ওই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, সুরা ইখলাস কুরআন মাজিদের এক-তৃতীয়াংশের সমান।” (বুখারি: ৫০১৩)
এখান থেকে স্পষ্ট হলো, একজন ব্যক্তি যদি একবার সুরা ইখলাস পাঠ করে, তবে তিনি এক-তৃতীয়াংশ কুরআন পাঠের সওয়াব অর্জন করবেন। আর যদি তিনবার পাঠ করেন, তবে পুরো কুরআন খতমের সমান সওয়াব মিলবে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য এক বিরাট অনুগ্রহ।
সুরা ইখলাসের আরেকটি বড় ফজিলত হলো—এটি জান্নাত লাভের মাধ্যম হবে। সহিহ বুখারিতে (হাদিস নম্বর: ৭৭৪) উল্লেখ আছে, এক সাহাবি রাসূলুল্লাহ (সা.)কে এসে বললেন—“হে আল্লাহর রাসূল! আমি সুরা ইখলাসকে ভালোবাসি।” তখন নবি (সা.) বললেন—“তুমি এ সুরাকে ভালোবাসো, এই ভালোবাসাই তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে।”
সুরা ইখলাস আমাদের শেখায়—আল্লাহ এক, তিনি অদ্বিতীয়, তিনি কারো উপর নির্ভরশীল নন, বরং সবকিছু তাঁর উপর নির্ভরশীল। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তিনি জন্মগ্রহণও করেননি। তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই। এক কথায়, এ সুরা তাওহিদের পূর্ণ ঘোষণা।
ছোট অথচ মহাসমৃদ্ধ সুরা ইখলাস পাঠের মধ্যে নিহিত রয়েছে অসীম সওয়াব। একবার পাঠ করলে এক-তৃতীয়াংশ কুরআনের সওয়াব, আর তিনবার পাঠ করলে পুরো কুরআন খতমের সওয়াব পাওয়া যায়। পাশাপাশি এটি জান্নাত লাভের মাধ্যম এবং বালা-মুসিবত থেকে রক্ষার ঢাল। সুতরাং, ব্যস্ত জীবনে যারা বেশি ইবাদতের সময় পান না, তাদের জন্য সুরা ইখলাস নিয়মিত পাঠ করা হতে পারে সহজ অথচ অশেষ ফজিলতের আমল।
বাংলাবার্তা/এমএইচ