ছবি: সংগৃহীত
তালাক অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি বিষয়। ভুল পন্থায় প্রয়োগ করলে যেমন গুনাহগার হবে, অন্যদিকে তালাকও কার্যকর হয়ে যাবে। তাই প্রত্যেক বিবেচক স্বামীর দায়িত্ব হলো, তালাকের শব্দ উচ্চারণ করা থেকে সতর্কতার সঙ্গে বিরত থাকা। অতি প্রয়োজন ছাড়া স্বামীর জন্য যেমন তালাক দেওয়া জায়েজ নয়, তেমনি স্ত্রীর জন্যও তালাক চাওয়া বৈধ নয়।
তালাকের পথ খোলা রাখা হয়েছে শুধু অতি প্রয়োজনের ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য। বর্তমান সমাজে কোনো পরিবারে তালাকের ঘটনা যে কত সংকট ও দুর্বিষহের কারণ হয় তা বলে বোঝানোর প্রয়োজন নেই। ইসলামে অতি প্রয়োজনে তালাকের অবকাশ থাকলেও বিষয়টি অপছন্দনীয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে অপ্রিয় বৈধ বস্তু হচ্ছে তালাক।
’ (আবু দাউদ : হাদিস ২১৭৭)
তালাক দেওয়ার শরিয়ত নির্দেশিত পদ্ধতি
যদি দাম্পত্য সম্পর্ক অচলাবস্থায় মীমাংসা ও সমাধানের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়, এ রকম চূড়ান্ত পর্যায়ে শরিয়ত স্বামীকে তালাক দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে। কোরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা অনুসারে তালাক দেওয়ার সর্বোত্তম পদ্ধতি হলো : স্ত্রী ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হলে ওই পবিত্রতাকালে স্ত্রী সহবাস না করে সুস্পষ্ট শব্দে এক তালাক দেবে। যেমন—‘আমি তোমাকে এক তালাক দিলাম।’ এ ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে স্বামী যদি স্ত্রীর ইদ্দত চলাকালীন মৌখিক বা স্ত্রীসুলভ আচরণের মাধ্যমে ফিরিয়ে নেয়, তাহলে আবার স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বহাল হয়ে যাবে; অন্যথায় ইদ্দত শেষ হওয়া মাত্রই বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
তখন স্ত্রী ইচ্ছা করলে সে অন্যত্র বিবাহ করতে পারবে। (বাদায়েউস সানায়ে : ৩/৮৮)
শরিয়ত নির্দেশিত পন্থায় তালাকের ক্ষেত্রে মীমাংসার সুযোগ
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, তালাকের পরে দাম্পত্য জীবনের সুখ স্মৃতি মনে পড়ে পরস্পরের গুণ ও অবদান স্মরণ করে উভয়েই অনুতপ্ত হয় এবং বৈবাহিক সম্পর্ক পুনর্বহাল করার আপ্রাণ চেষ্টা করে। যদি শরিয়তের নির্দেশনা অনুযায়ী এক তালাক দেওয়া হয়, তাহলে এর সুযোগ থাকে এবং আবার বৈবাহিক জীবন শুরু করতে পারে। এ পদ্ধতিতে স্ত্রীকে পুনঃ গ্রহণের অবকাশ থাকে এবং তালাকের কারণে সৃষ্ট সমস্যা নিয়েও ভাববার সুযোগ হয়।
আর যদি ইদ্দত শেষ হয়ে বিচ্ছেদের পর আবার তারা দাম্পত্য জীবনে ফিরে আসতে চায়, তাহলে নতুন মোহর ধার্য করে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে।
এ ক্ষেত্রে অন্যত্র বিবাহের প্রয়োজন হবে না। দুর্ভাগ্যবশত দ্বিতীয়বারও তাদের মধ্যে বনিবনা না হলে এবং আবার তালাকের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সে ক্ষেত্রেও ইসলামের নির্দেশনা অনুসরণ করে উক্ত সুবিধা ভোগ করতে পারবে। কোরআনে কারিমে এসেছে—‘তালাক দুইবার। অতঃপর বিধি মোতাবেক রেখে দেবে কিংবা সুন্দরভাবে ছেড়ে দেবে।...’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২২৯)
এক এক করে দুইবার পর্যন্ত এ সুযোগ রয়েছে। এমনকি ‘খোলা’ ও ‘বাইন’ তালাকেও দুইবার পর্যন্ত পুনর্বিবাহের সুযোগ রয়েছে। তবে তৃতীয় তালাক প্রয়োগ করলে আর স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকবে না, এমনকি পুনরায় বিবাহও করতে পারবে না। কেননা এই সুযোগ দুই তালাক পর্যন্তই সীমিত। অসতর্কতায় তৃতীয় তালাক দিয়ে ফেললে আর ঘরসংসার করার সুযোগ থাকবে না; বরং সম্পূর্ণ হারাম হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতএব, যদি সে তাকে (তৃতীয়) তালাক দিয়ে দেয় তাহলে সে পুরুষের জন্য হালাল হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত ভিন্ন একজন স্বামী সে গ্রহণ না করে, অতঃপর সে (স্বামী) যদি তাকে তালাক দেয়।...’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৩০)
শরিয়তের নির্দেশনা অমান্য করার কুফল
এভাবেই শরিয়ত বৈবাহিক সম্পর্ক অটুট রাখার অবকাশ দিয়েছে। কিন্তু মানুষ শরিয়তের এই সুন্দর পদ্ধতি উপেক্ষা করে। শিক্ষিত-অশিক্ষিত সব শ্রেণির লোকের মধ্যেই এ প্রবণতা দেখা যায়, যখন রাগে-ক্ষোভে লিখিত বা মৌখিকভাবে তালাক দেয় তখন একসঙ্গে তিন তালাকই দিয়ে দেয়। তিন তালাক দিলে ইদ্দত চলাকালেও স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকে না এবং ইদ্দতের পরও নতুনভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সুযোগ থাকে না। এ অবস্থায় অনুতপ্ত হওয়া এবং আপসের জন্য আগ্রহী হওয়া কোনো কাজে আসে না। নিজ হাতেই সব সুযোগ বিনষ্ট করা হয়েছে। তালাক দেওয়ার শরিয়তসম্মত পদ্ধতি অনুসরণ না করার ফলে স্ত্রী তার জন্য সম্পূর্ণ হারাম হয়ে গেছে। এ অবস্থায় আবার তাকে স্ত্রীরূপে ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনাটি সুদূর পরাহত।
সারকথা, দাম্পত্য জীবন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে একটি বড় নিয়ামত। স্বামী-স্ত্রী উভয়ের কর্তব্য, এই নিয়ামতের যথাযথ মূল্যায়ন করা এবং একে-অপরের সব অধিকার আদায় করা। স্ত্রীর জন্য উচিত নয় কথায়-কথায় স্বামীর কাছে তালাক চাওয়া। আবার স্বামীর জন্যও জায়েজ নয় আল্লাহর দেওয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



