
ছবি: সংগৃহীত
পবিত্র মক্কা শরিফে আল্লাহর কাবাঘর তাওয়াফ করা ওমরাহ ও হজের অন্যতম মূল আনুষ্ঠানিকতা। এটি শুধু ফরজ বা ওয়াজিব তাওয়াফেই সীমাবদ্ধ নয়— বরং মুসল্লিরা নফল তাওয়াফও বেশি বেশি করে থাকেন, যাতে আল্লাহর ঘরের নিকটে ইবাদতের সওয়াব লাভ হয়। কিন্তু তাওয়াফের সময় হঠাৎ যদি ওজু ভেঙে যায়, তখন অনেক হাজি বা ওমরাহ পালনকারী দ্বিধায় পড়ে যান— এখন কি পুরো তাওয়াফ শুরু থেকে করতে হবে, নাকি যেখানে থেমেছিলেন সেখান থেকেই শুরু করবেন?
এ বছর একজন মুসল্লি তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন— আল্লাহর রহমতে তিনি ওমরাহর সৌভাগ্য লাভ করেন এবং নফল তাওয়াফ ও অন্যান্য আমলের মধ্যেই অধিকাংশ সময় কাটান। কিন্তু তাওয়াফ চলাকালীন কোনো কোনো সময় ওজু ভেঙে গেলে তিনি বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন যে, ওজু করে আসার পর তাওয়াফ আবার প্রথম থেকে শুরু করা জরুরি, নাকি পূর্বের অবস্থান থেকে বাকিটা সম্পন্ন করলেই হবে।
ফিকহবিদদের মতে, তাওয়াফের জন্য পূর্ণ ওজু থাকা শর্ত। যদি তাওয়াফ চলাকালীন ওজু ভেঙে যায়, তবে অবশ্যই মসজিদুল হারাম থেকে বের হয়ে পুনরায় ওজু করতে হবে। এরপর, যদি ওজু ভাঙার আগে তাওয়াফের অধিকাংশ (অন্তত চার চক্কর) সম্পন্ন হয়ে থাকে, তাহলে ওজু করে এসে বাকি চক্করগুলো সম্পন্ন করলেই তাওয়াফ আদায় হয়ে যাবে। এতে কোনো গুনাহ বা শর্ত ভঙ্গ হবে না।
কিন্তু যদি ওজু ভাঙার আগে অধিকাংশ চক্কর সম্পন্ন না হয়ে থাকে— অর্থাৎ চার চক্করের কম হয়ে থাকে— সেক্ষেত্রে ওজু করে এসে প্রথম থেকে নতুন করে তাওয়াফ শুরু করাই উত্তম ও ফিকহসম্মত। এতে আমল অধিক পরিপূর্ণ হবে এবং ইখলাসের প্রতিফল পাওয়া যাবে।
তাবেঈ আলেম আতা ইবনে আবি রাবাহ (রহ.) বলেছেন—
تَسْتَقْبِلُ الطَّوَافَ أَحَبُّ إلَيَّ، وَإِنْ فَعَلَتْ فَلاَ بَأْسَ بِهِ
(অর্থ: তাওয়াফের মাঝে ওজু ভেঙে গেলে ওজু করে এসে শুরু থেকে তাওয়াফ করা আমার কাছে অধিক প্রিয়। তবে যদি যে স্থান থেকে ওজু ভেঙেছে সেখান থেকে আবার শুরু করা হয়, তাতেও কোনো অসুবিধা নেই।)
— মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদিস নং ১৩৬০২
এটি প্রমাণ করে যে, ইসলামে উভয় পদ্ধতিই বৈধ, তবে প্রথম থেকে শুরু করা উত্তম ও সওয়াবের দিক দিয়ে বেশি পূর্ণতা প্রদান করে।
উল্লেখযোগ্য ফিকহি সূত্রসমূহ:
-
আলমুহীতুর রাযাবী (২/২০৬)
-
ফাতহুল কাদীর (২/৩৮৯)
-
আলমাসালিক ফিল মানাসিক (১/৪৪৮)
-
রদ্দুল মুহতার (২/৪৯৭)
-
গুনইয়াতুন নাসিক (পৃষ্ঠা ১২৭)
সারসংক্ষেপ:
তাওয়াফ চলাকালীন ওজু ভেঙে গেলে মুসল্লিকে অবশ্যই নতুন করে ওজু করতে হবে। এরপর—
যদি চার বা ততোধিক চক্কর ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়ে থাকে, তবে বাকি চক্করগুলো করলেই তাওয়াফ সম্পূর্ণ হবে। যদি চার চক্করের কম হয়ে থাকে, তবে প্রথম থেকে শুরু করাই উত্তম।
এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে আমল হবে শরীয়তসম্মত এবং পূর্ণতার দিক থেকেও শ্রেষ্ঠ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ