
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে বিভিন্ন সামাজিক ও কল্যাণমূলক সংগঠন বছরের পর বছর ধরে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে কাজ করছে। এসব সংগঠন সাধারণ দানের পাশাপাশি মুসলিম সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ—জাকাত—সংগ্রহ করেও তা সমাজের দরিদ্র, অভাবী ও বিপদগ্রস্ত মানুষের মধ্যে বিতরণ করে থাকে। চিকিৎসা সহায়তা, চাষাবাদের মূলধন, লেখাপড়ার খরচ, বিয়ে-শাদীর আয়োজন কিংবা সুদী ঋণে জড়িয়ে পড়া মানুষকে মুক্ত করা—এসবই থাকে তাদের কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে একটি প্রশ্ন সামনে এসেছে—এই জাকাত ফান্ড থেকে কি জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত নন এমন ব্যক্তিদেরকে সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া যাবে? অনেক সংগঠনই নানা প্রয়োজনে জাকাত-অযোগ্য ব্যক্তিদের অনুরোধে এমন ঋণ দেওয়ার কথা ভাবছে। কিন্তু শরীয়তের দৃষ্টিতে এর বৈধতা নিয়ে রয়েছে গুরুতর প্রশ্ন।
ইসলামী ফিকহের আলোকে জাকাত আদায়ের জন্য অন্যতম মৌলিক শর্ত হলো—জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তিকে সম্পূর্ণ মালিক বানিয়ে দেওয়া। শুধু ব্যবহার বা সুবিধা ভোগের সুযোগ দেওয়া যথেষ্ট নয়; তাকে সেই অর্থ বা দ্রব্যের পূর্ণ মালিকানা প্রদান করতে হবে। তাই জাকাতের টাকা ঋণ হিসেবে দিলে, যদিও ঋণগ্রহীতা জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হন, তবুও জাকাত আদায় হবে না। কারণ ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক মালিকানা হয় না, বরং ফেরত দেওয়ার শর্ত থাকে।
প্রশ্নের আলোকে দেখা যায়, এসব সংগঠনের পরিচালকরা আসলে জাকাতদাতাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। দাতাগণ তাদের জাকাতের অর্থ এই বিশ্বাসে সংগঠনের হাতে তুলে দেন যে, তা শরীয়তের নির্ধারিত খাতেই ব্যয় হবে। সুতরাং সংগঠনের নৈতিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব হলো—যথাসম্ভব দ্রুত সেই অর্থ প্রকৃত হকদারের হাতে পৌঁছে দেওয়া। এতে দাতার ফরজ আদায় নিশ্চিত হয়।
জাকাত ফান্ড থেকে ঋণ প্রদান করলে একাধিক শরীয়তসঙ্গত ও বাস্তব সমস্যা দেখা দেয়—
অর্থের অপব্যবহার: জাকাতের অর্থ নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় না করে অন্য উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা ইসলামী নীতিমালা বিরোধী।
জাকাত আদায়ে বিলম্ব: ঋণ হিসেবে অর্থ প্রদান করলে, তা ফেরত না আসা পর্যন্ত জাকাত আদায় হবে না। অল্প সময়ের বিলম্ব অনুমোদিত হলেও দীর্ঘ বিলম্ব শরীয়তসম্মত নয়।
অর্থ ফেরত না পাওয়ার ঝুঁকি: বর্তমান যুগে ঋণ আদায় না হওয়ার ঘটনা সাধারণ ব্যাপার। যদি এমন হয়, তবে সেই টাকার জাকাত আদায় অসম্পূর্ণ থেকে যাবে এবং সংগঠনের দায়িত্বশীলদেরকে নিজ পকেট থেকে তা পরিশোধ করতে হবে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—জাকাতের অর্থ সংগঠনের পরিচালন ব্যয়ে ব্যবহার করা যাবে না। অফিস খরচ, কর্মচারীর বেতন বা প্রশাসনিক ব্যয় অন্য উৎস থেকে চালাতে হবে। সংগৃহীত জাকাতের প্রতিটি টাকা সরাসরি হকদারের হাতে পৌঁছানো বাধ্যতামূলক।
ইসলামী আলেমরা মনে করিয়ে দিয়েছেন, জাকাত ইসলামের একটি অপরিহার্য ফরজ বিধান। এ কারণে জাকাতের অর্থ ব্যবস্থাপনায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। যার সামর্থ্য আছে, তিনি নিজের হাতে জাকাত বিতরণ করাই উত্তম। তবে প্রয়োজনে বিশ্বস্ত, বিজ্ঞ ও শরীয়তসম্মত নিয়ম জানেন এমন ব্যক্তির হাতে তা তুলে দেওয়া যেতে পারে।
সবশেষে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন—যে কোনো সামাজিক সংগঠন জাকাত ফান্ড পরিচালনার আগে অবশ্যই নির্ভরযোগ্য দারুল ইফতার মাধ্যমে তাদের কার্যপদ্ধতি যাচাই ও অনুমোদন করিয়ে নেওয়া উচিত। এতে মানুষের ফরজ আদায়ে কোনো ত্রুটি বা গাফিলতি হবে না এবং সংগঠনের প্রতি দাতাদের আস্থা বজায় থাকবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ