
ফটো কোলাজ: বাংলাবার্তা
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে নানান ইস্যুতে বাংলাদেশে ও ভারতের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। উগ্রবাদী ইসকনের বহিষ্কুত নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী প্রভুর গ্রেপ্তারের পর এই টানাপোড়েন যেন বেড়েছে ‘হাজারগুণে’। প্রতিবেশী দুদেশের মধ্যে চলছে অস্বস্তি। এ সম্পর্কের তিক্ততা সহসা কাটছে না বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এদিকে চিন্ময় ইস্যুর জের ধরে আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটে বাংলাদেশের পতাকা নামিয়ে পুড়িয়ে ফেলার ঘটনাও। এর প্রতিবাদে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারাও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও ক্ষোভ জানায়।
অন্যদিকে ত্রিপুরায় বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য সব ধরনের হোটেল পরিসেবা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। শুধু তাই নয়, চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে দেশটিতে ভ্রমণ ও চিকিৎসার কাজে যাওয়া বাংলাদেশিদের নানাভাবে হয়রানিও করা হচ্ছে। হোটেল ভাড়া না পেয়ে ইতোমধ্যে বিপাকে পড়েছেন বাংলাদেশি পর্যটকরা। বাধ্য হয়ে প্রয়োজনীয় কাজ না সেরেই দেশে ফিরে আসছেন।
আগরতলা থেকে ফিরে আসা যাত্রীরা আখাউড়া স্থলবন্দরে জানিয়েছেন সেখানে বাংলাদেশিদের নানান হয়রানির অভিযোগ।
কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার বাসিন্দা ফরিদ মিয়া জানান, সোমবার আখাউড়া স্থলবন্দর হয়ে আগরতলায় গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে গিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। বাংলাদেশি ও মুসলিম হওয়ায় ভাড়া নেওয়ার একঘণ্টা পরই আমাকে হোটেল থেকে বের করে দেয় কর্তৃপক্ষ। হোটেল থেকে বের করে দেওয়ার পর টাকা ফেরত চাইলে তা দেয়নি। পরে বাধ্য হয়ে শহর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে রাত কাটিয়ে সকালে দেশে ফেরার জন্য চেকপোস্টের দিকে রওনা হই। এখানে এসে দেখি বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশবিরোধী বিক্ষোভ হচ্ছে। আর বলা হচ্ছে বাংলাদেশি ও ইউনূসের (প্রধান উপদেষ্টা) লোক পেলেই পেটাবে। সারা দিনের চেষ্টার পর বিকালে দেশে ফিরতে পেরে মনে হচ্ছে প্রাণে বেঁচে ফিরেছি।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বাসিন্দা মুজিবুর রহমান জানান, শিলচরে ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ফেয়ারে জামদানি শাড়ির স্টল দিয়েছেন। সোমবার একদল যুবক জয় শ্রী রাম স্লোগান দিয়ে মেলায় এসে দোকান ভাঙচুর করে এবং হুমকি দেয়। এ সময় তার সব টাকা পয়সা লুটপাট করে নিয়ে যায়। এদিকে, সীমান্তে অতিরিক্ত সতর্কতার কথা জানিয়েছেন বিজিবি ৬০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল জাবের বিন জব্বার।
পরিস্থিতি বিবেচনায় আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে কনস্যুলার সেবাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গতকাল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, নিরাপত্তার কারণে আপাতত আগরতলার বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে কনস্যুলার সেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে ওই মিশন থেকে বাংলাদেশের ভিসা সেবা বন্ধ থাকবে। পররাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, নিরাপত্তাহীনতাজনিত অবস্থার প্রেক্ষাপটে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে সব ধরনের ভিসা ও কনস্যুলার সেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এত কিছুর পরও কোনো নির্দিষ্ট একটি ইস্যু দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক মূল্যায়ন করা যাবে না বলে মনে করছেন ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা।
প্রণয় ভার্মা বলেন, আমরা আমাদের আলোচনা চলমান রাখব, আজকের বৈঠক তেমনই একটি বিষয়। আমাদের বিস্তৃত সম্পর্ক রয়েছে, পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। আমরা একটি ইস্যু দিয়ে সেটি মূল্যায়ন করতে পারব না। আমাদের পরস্পরনির্ভর বিষয় রয়েছে। যেটি দুদেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। হাইকমিশনার আরও বলেন, সর্বশেষ দুই মাসে আমাদের পরস্পর সহযোগিতার জন্য ইতিবাচক কিছু উন্নয়ন হয়েছে। আমাদের অনেক ইতিবাচক বিষয় রয়েছে। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা সামনে অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করে যাবো।
এদিকে আগরতলার ঘটনাকে ‘দুঃখজনক’ উল্লেখ করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বিবৃতি দিয়েছে। তারা বলেছে, কূটনৈতিক ও কনস্যুলার সম্পত্তি কোনো অবস্থাতেই লক্ষ্যবস্তু করা উচিত নয়।
নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘ব্যবসা ও বাণিজ্যে আমাদের সাথে সুসম্পর্ক না রাখলে ভারত বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে।’
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) গণআকাঙ্ক্ষা মঞ্চের উদ্যোগে আয়োজিত গণআকাঙ্ক্ষা, গণঅভ্যুত্থান প্রত্যাশা, প্রাপ্তি ও বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা শীর্ষক মতবিনিময় সভায় যোগ দিয়ে এ কথা বলেন উপদেষ্টা।
এ সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উদ্দেশে উপদেষ্টা বলেন, দায়িত্ব নিতে পারলে নির্বাচনে আসেন। ক্ষমতায় থাকতে চাইলে নির্বাচনে আসার দরকার নেই।
মৎস ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, বাংলাদেশের মাটিতে অবশ্যই শেখ হাসিনার বিচার হবে। হাসিনা যেকোনো মূল্যে ফেরানো হবে।
বাংলাবার্তা/এমআর