ছবি: সংগৃহীত
পণ্য রপ্তানিতে ধারাবাহিক পতন অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ নভেম্বর মাসেও রপ্তানি আয় প্রায় ৬ শতাংশ কমেছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় মাসটিতে রপ্তানি আয় ২৩ কোটি ডলার হ্রাস পেয়েছে, যা দেশীয় মুদ্রায় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ। চলতি বছরের নভেম্বরে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩৮৯ কোটি ডলার। এ নিয়ে টানা চার মাস ধরে রপ্তানি কমার প্রবণতা অব্যাহত থাকল। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটি বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) তাদের ওয়েবসাইটে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।
অবশ্য গত বছরের একই মাসের সঙ্গে তুলনায় রপ্তানি কমলেও আগের মাস অক্টোবরের তুলনায় রপ্তানি ২ শতাংশের মতো বেড়েছে নভেম্বর মাসে। ইপিবির প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত অক্টোবর মাসে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৮২ কোটি ডলার। অর্থাৎ রপ্তানি বেড়েছে ৮ কোটি ডলার বা প্রায় এক হাজার কোটি টাকার মতো।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর—এই প্রথম পাঁচ মাসে সামগ্রিক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৬২ শতাংশে। এ সময়ে রপ্তানি আয় হয়েছে দুই হাজার তিন কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল এক হাজার ৯৯১ কোটি ডলার। টানা চার মাস রপ্তানি কমলেও মোট হিসাব এখনও নেতিবাচক হয়নি মূলত জুলাই মাসের ব্যতিক্রমধর্মী প্রবৃদ্ধির কারণে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগমুহূর্তে উদ্যোক্তারা দিন-রাত কাজ করে যতটা সম্ভব পণ্য জাহাজীকরণে তৎপর ছিলেন। ব্র্যান্ড ক্রেতারাও বাড়তি শুল্ক এড়াতে আগাম আমদানিতে ঝুঁকেছিলেন। ফলে জুলাই মাসে স্বাভাবিকের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে রপ্তানি বৃদ্ধি পায়, যা পাঁচ মাসের সামগ্রিক ফলাফলকে ইতিবাচক রাখায় সহায়তা করেছে।
৩১ জুলাই ওয়াশিংটনের ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রে বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ প্রতিশোধমূলক শুল্ক ৭ আগস্ট রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে কার্যকর হয়। নির্ধারিত সময়ের আগে যেসব পণ্য জাহাজীকরণ পর্যায়ে ছিল, সেগুলো যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাতে যত সময়ই লাগুক না কেন—সে সব চালানে এই শুল্ক আরোপ হয়নি। এর প্রভাবেই জুলাই মাসে রপ্তানিতে ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা যায়। তবে নতুন অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস থেকেই রপ্তানিতে ধাক্কা লাগে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আয় কমে প্রায় ৩ শতাংশ। তৃতীয় মাসেও একই প্রবণতা অব্যাহত থাকে এবং রপ্তানি আরও কমে প্রায় ৫ শতাংশ। চতুর্থ মাসে এ পতন দাঁড়ায় প্রায় ৭ শতাংশে।
ইপিবির তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে প্রধান পণ্য তৈরি পোশাক ছাড়াও রপ্তানি তালিকার প্রায় সব পণ্যেই নেতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে। নভেম্বরে তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমেছে ৫ শতাংশ। রপ্তানি হয়েছে ৩১৪ কোটি ডলার পোশাক, যা আগের বছরের একই মাসে ছিল ৩৩১ কোটি ডলারের কিছু কম।
এ প্রসঙ্গে রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক এবিএম শামসুদ্দীন আহমেদ বলেন, পোশাকের রপ্তানি কমে যাওয়ার কারণ হচ্ছে প্রধান বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) চীনের আগ্রাসী রপ্তানি। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনা পণ্যে উচ্চহারের শুল্কের কারণে তারা অত্যন্ত কম দামে এখন ইইউর দেশগুলোতে রপ্তানি করছে। এ কারণে সেখানে বাংলাদেশের রপ্তানি কমছে। তিনি বলেন, তৈরি পোশাকের দুই ধরনের পণ্য রয়েছে। এগুলো হচ্ছে নেভার আউট অব স্টক (এনওএস) এবং ফ্যাশন পণ্য। এনওএস ক্যাটেগরির পোশাক সারা বছরের পণ্য। এসব পণ্যে তাৎক্ষণিক দর কমিয়ে বাজার দখলে নেওয়া সহজ। চীন সেই কাজটিই করছে। কারণ তাদের নিজস্ব সব ধরনের কাঁচামাল আছে। এ ছাড়া সার্বিকভাবে এখন তৈরি পোশাকের লিন সিজন বা খরা মৌসুম। এ সময় সাধারণত পোশাকের চাহিদা কমই থাকে। আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত এ অবস্থা চলতে পারে।
পোশাকের বাইরে রপ্তানি তালিকার প্রধান পণ্যগুলোতেও নভেম্বর মাসে উল্লেখযোগ্য পতন দেখা যায়। কৃষিপণ্যের রপ্তানি কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ, যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ২৮ লাখ ডলারে। ওষুধের রপ্তানি কমেছে প্রায় ৯ শতাংশ, রপ্তানি আয় হয়েছে ২ কোটি ডলার। হোম টেক্সটাইল রপ্তানিতে পতন হয়েছে প্রায় ৮ শতাংশ, যেখানে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলারে। পাট ও পাটপণ্যের রপ্তানি কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ, আয় হয়েছে ৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার। চামড়ার রপ্তানি নভেম্বরে কমেছে প্রায় ২২ শতাংশ। তবে পুরো ক্যাটেগরিতে—চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের সম্মিলিত রপ্তানি—গড়ে ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। হিমায়িত ও জীবন্ত মাছের রপ্তানিও কমেছে ৯ শতাংশের বেশি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



