
ছবি: সংগৃহীত
শুক্রবার ইসলাম ধর্মে এক বিশেষ দিনের মর্যাদা নিয়ে পরিচিত। মুসলমানদের জন্য এটি শুধু সপ্তাহের শেষ নয়, বরং তা শুভ্রতা, পবিত্রতা ও আধ্যাত্মিক ফজিলতে পরিপূর্ণ। সপ্তাহের ক্লান্তি, দৈনন্দিন দুঃখ, হতাশা ও শারীরিক পরিশ্রমকে একটি বিশ্রামদায়ী ও আনন্দময় মুহূর্তে রূপান্তরিত করে এই দিনটি। বিশেষভাবে জুমার নামাজ, ফরজ গোসল, মসজিদে উপস্থিতি এবং খুতবা শোনা—এসব ইবাদত মুসলমানদের জন্য অতুলনীয় সওয়াবের উৎস।
হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা আমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতদেরকে জুমার দিনের ফজিলত সম্পর্কে অজ্ঞ রেখেছিলেন। ইহুদি সম্প্রদায়ের জন্য শুভদিন ছিল শনিবার, খ্রিষ্টানদের জন্য রবিবার। মুসলমানদের জন্য আল্লাহ তায়ালা শুক্রবারকে গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জুমার দিন মুসলিম উম্মাতের জন্য বিশেষ—এ দিন অন্যদের তুলনায় তাদের মর্যাদা বেশি। (মুসলিম : ১৪৭৩)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি জুমার দিনে গোসল করে এবং প্রথম প্রহরে মসজিদে উপস্থিত হয়, সে যেন একটি উট কোরবানির সওয়াব পেয়েছে। দ্বিতীয় প্রহরে গেলে গরু, তৃতীয় প্রহরে ভেড়া, চতুর্থ প্রহরে মুরগি এবং পঞ্চম প্রহরে ডিম কোরবানির সওয়াব লাভ করে। খুতবা চলাকালীন ফেরেশতারা আর আমল লেখেন না, তারা শুধু খুতবা শুনতে থাকেন। (বোখারি : ৮৮১)
আমাদের সমাজে প্রচলিত একটি ধারণা আছে—‘যদি কেউ শুক্রবার মারা যায়, তার কবরের সব আজাব মাফ হয়ে যায় এবং তিনি বিনা হিসেবে জান্নাতে চলে যান’। তবে ইসলামী স্কলাররা এই বিষয়ে সতর্ক।
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে মুসলিম জুমার দিনে অথবা জুমার রাতে মৃত্যুবরণ করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে কবরের ফিতনা থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন।” (তিরমিজি : ১০৯৫)
ইসলামী স্কলারদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এটি সরাসরি জান্নাতের নিশ্চয়তা নয়। মুল্লা আলী কারী (রহ.) উল্লেখ করেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিনে বা রাতে মারা যাবে, তার কবরের আজাব থেকে মুক্তি লাভ করা প্রমাণিত, কিন্তু কিয়ামত পর্যন্ত আজাব বন্ধ থাকার কোনো ভিত্তি নেই। (মিনাহুর রাওদিল আযহার ফি শরহি ফিকহিল আকবার : পৃষ্ঠা ২৯৫-২৯৬)
শায়খ আহমাদুল্লাহও বলেছেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মুসলিম ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে আল্লাহ তায়ালা তাকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করেন। অর্থাৎ, কবরের আজাব ও ফিতনা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। যেহেতু কবর হলো আখিরাতের প্রথম ধাপ, এটি সহজভাবে পার হলে পরবর্তী ধাপগুলোও তুলনামূলকভাবে সহজ হবে।
উসমান ইবনে আওফান (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবীজি (সা.) বলেছেন, কবর হলো আখিরাতের প্রথম ঘাঁটি। যদি কোনো ব্যক্তি কবরের ঘাঁটি সহজে উত্তীর্ণ হন, পরবর্তী ধাপও সহজ হবে। তবে যদি কবরের ঘাঁটি কঠিন হয়, তাহলে পরবর্তী পরীক্ষাগুলো আরও কঠিন হবে।
এই হাদিসগুলোর আলোকে বোঝা যায়, শুক্রবারে মৃত্যুবরণ একজন মুসলিমের জন্য শুভসংকেত। এটি ভালো মৃত্যুবরণ হিসেবে বিবেচিত এবং আখিরাতের প্রতিটি ধাপে প্রভাব ফেলতে পারে। তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায় না যে জুমার দিনে মৃত ব্যক্তি সরাসরি জান্নাতে প্রবেশ করবেন বা কবরের আজাব কিয়ামত পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
শুক্রবার মুসলিম উম্মাতের জন্য বিশেষ দিন। এ দিনে মৃত্যুবরণ অবশ্যই আধ্যাত্মিকভাবে শুভ গণ্য, তবে কবরের আজাব ও জান্নাতের বিষয় নির্ভর করে আল্লাহর কৃপা এবং মৃত ব্যক্তির ইবাদত ও আমলের ওপর। এ কারণে শুক্রবারে মৃত্যুবরণের সংবাদ বা আশা ইসলামী সমাজে সম্মান ও দৃষ্টান্ত হিসেবে গণ্য করা হয়, তবে তা অতিরিক্ত ব্যাখ্যা বা ভুল ধারণার সৃষ্টি করা উচিত নয়।
শারিয়তের আলোকে বলা যায়, শুক্রবারের মৃত্যু একজন মুসলিমের জন্য কবরের ফিতনা থেকে মুক্তি, আল্লাহর বিশেষ মর্যাদা এবং আখিরাতের ধাপগুলোর সহজতা নিশ্চিত করতে পারে—যা মুসলমানদের জন্য এক অনুপ্রেরণামূলক ও আশাব্যঞ্জক বিষয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ