
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে একটি যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। শনিবার (২৮ জুন) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার সিংপাড়া-নওয়াপাড়া ও হাসাড়া ব্রিজ-২ এর মধ্যবর্তী এলাকায় এ ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় আরও অন্তত ১৫ জন যাত্রী আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
মুন্সিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম জানান, যশোর থেকে ঢাকাগামী একটি নৈশকালীন পরিবহন (হামদান এক্সপ্রেস) ঢাকামুখী এক্সপ্রেসওয়েতে চলন্ত একটি ট্রাকের পেছনে জোরালোভাবে ধাক্কা দেয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, চালক হয়ত ঘুমের ঘোরে ছিলেন বা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, ধাক্কা খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই উভয় যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এক্সপ্রেসওয়ের সড়ক দ্বীপে থাকা রেলিংয়ে আঘাত করে। এতে বাসটির সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং ট্রাকটির পেছনের অংশ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় বাকিদের উদ্ধার করে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়, সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুইজন মারা যান।
দুর্ঘটনায় নিহত চারজনের কারো নাম-পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। নিহতরা সবাই পুরুষ বলে জানিয়েছে উদ্ধারকারী বাহিনী। আহতদের মধ্যে কয়েকজন বাসযাত্রীর অবস্থা সংকটাপন্ন, যাদের ঢাকায় স্থানান্তরের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিস ও হাইওয়ে পুলিশের একটি টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা চালায়। বাস ও ট্রাকের ভেতরে আটকে থাকা আহতদের হাইড্রোলিক কাটার দিয়ে বের করে আনা হয়।
দুর্ঘটনার পর এক্সপ্রেসওয়ের ওই অংশে কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। তবে হাইওয়ে পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপে দ্রুত বিকল্প লেনে গাড়ি চলাচল চালু করা হয়।
হাসাড়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জানান, বাসটির গতি ছিল অত্যন্ত বেশি, যা দুর্ঘটনার কারণ হয়ে থাকতে পারে। এছাড়া ট্রাকটি ঠিক কোন কোম্পানির ছিল, সেটিও শনাক্তের চেষ্টা চলছে। উভয় গাড়ির চালক ও সহকারীদের ব্যাপারে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।
দুর্ঘটনার পরপরই স্থানীয় বাসিন্দারা প্রথমে উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, সংঘর্ষের শব্দ এতটাই প্রচণ্ড ছিল যে আশপাশের বাড়িঘর কেঁপে ওঠে। তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পান, বেশ কিছু যাত্রী রক্তাক্ত অবস্থায় বাস থেকে ছিটকে পড়েছেন।
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে দেশের সবচেয়ে ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলোর একটি। এই রুটে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এ সড়কে বারবার দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটছে। অতিরিক্ত গতি, চালকদের অসতর্কতা এবং ট্রাফিক আইন না মানাই এসব দুর্ঘটনার মূল কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষ করে নৈশকালীন যাত্রীবাহী পরিবহনগুলোতে চালকদের পর্যাপ্ত বিশ্রামের ব্যবস্থা না থাকা এবং অবসাদগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানা গেছে।
এই দুর্ঘটনা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল দেশের মহাসড়কে নিরাপত্তা পরিস্থিতি কতটা নাজুক। যাত্রী পরিবহনে গতি নিয়ন্ত্রণ, চালকদের প্রশিক্ষণ, যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং সড়ক আইন প্রয়োগে কঠোরতা আনাই এখন সময়ের দাবি। নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে এবং আহতদের চিকিৎসা চলছে।
ঘটনার তদন্তে একটি কমিটি গঠন করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। সবকিছু মিলিয়ে একটি সাধারণ যাত্রা কীভাবে মৃত্যু যাত্রায় পরিণত হয়, তারই করুণ চিত্র এই দুর্ঘটনা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ