
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান ৫ আগস্টকে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। শুক্রবার (২৭ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই মন্তব্য করেন। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, ইতিহাসের বাঁকবদল এবং অন্তর্বর্তী সরকারের গঠনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি মনে করেন, ৫ আগস্ট দিনটিই বাংলাদেশের জন্য নতুন যাত্রার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “৮ নয়, ৫ আগস্টকেই ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণা করা উচিত।” এই সংক্ষিপ্ত বাক্যের মধ্যেই তিনি তুলে ধরেন দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ইতিহাসের মোড় ঘোরানো এক পর্বের তাৎপর্য। কারণ ওই দিনটিই ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থান’ চূড়ান্ত রূপ নেয়।
৫ আগস্টকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিশেষ একটি আবহ সৃষ্টি হয়েছে। ওই দিন রাজধানী ঢাকাসহ দেশজুড়ে চলমান গণ–আন্দোলন, বিক্ষোভ ও ছাত্র-জনতার সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ায় টানা তৃতীয় মেয়াদে শাসন করা আওয়ামী লীগ সরকার। এর ঠিক পরদিন ৬ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়।
প্রাথমিকভাবে এই নতুন সরকারের পক্ষ থেকে ৬ আগস্টকেই ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু এর বিপরীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট নাগরিকরা ৫ আগস্টকে দিনটির প্রকৃত প্রতীকী ও ঐতিহাসিক তাৎপর্যের অধিকারী বলে মনে করছেন।
জামায়াত আমির শফিকুর রহমানের অবস্থানও সেই ধারাবাহিকতায়। তার মতে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনই ছিল 'নতুন বাংলাদেশ' নামক রূপান্তর-প্রক্রিয়ার সূচনা। তাই এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া জরুরি।
তিনি বলেন, “৫ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল দিন। এ দিনেই বাংলাদেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে, আত্মদানের মাধ্যমে একটি দুঃশাসনের অবসান ঘটিয়েছে। এই দিনটিকে ইতিহাসের পাতায় শুধুই গণ–অভ্যুত্থান হিসেবে নয়, বরং নতুন বাংলাদেশের রূপকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা উচিত।”
৫ আগস্টকে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ হিসেবে পালনের পক্ষে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ, নাগরিক ঐক্যের সারজিস আলমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, বুদ্ধিজীবী এবং পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা। তাদের মতে, ৫ আগস্ট ছিল একটি ঐতিহাসিক ‘ব্রেকিং পয়েন্ট’—যেখানে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনরোষ বিস্ফোরিত হয়েছিল।
তবে এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে কিছুটা বিতর্কও তৈরি হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার প্রাথমিকভাবে ৬ আগস্টকে দিবস ঘোষণা করলেও, এখন সরকারপক্ষ থেকে এ নিয়ে নতুন করে পর্যালোচনার ইঙ্গিত এসেছে। বলা হচ্ছে, গণআন্দোলন, সরকার পতন ও নতুন যাত্রার প্রতীকী ব্যাখ্যা বিবেচনায় ৫ আগস্টকে দিবস ঘোষণার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ কবে পালন করা হবে—তা এখন কেবল তারিখের বিতর্ক নয়, বরং নতুন রাষ্ট্রচিন্তার আত্মপ্রকাশের প্রশ্নেও পরিণত হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, “৬ আগস্টে সরকার গঠনের আনুষ্ঠানিকতা হলেও, ৫ আগস্টেই নতুন পথচলা শুরু হয়েছিল।”
অন্যদিকে, ৫ আগস্ট দিনটি রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি পেলেই, গণআন্দোলনে নিহতদের স্মরণ, শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং নতুন রাষ্ট্রনৈতিক চেতনার রূপায়ণে আরও অর্থবহ হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন অনেকে।
সংক্ষেপে, ৫ আগস্টকে ঘিরে এখন কেবল স্মৃতিচারণ নয়—চলছে ইতিহাসের পুনর্লেখনের চেষ্টাও। ‘নতুন বাংলাদেশ’ নির্মাণের সূচনালগ্নকে স্মরণীয় করে রাখতে যে দিনটিকে চূড়ান্তভাবে বেছে নেওয়া হবে, তা নির্ধারণ করবে আমাদের রাষ্ট্রচেতনার নতুন দিকনির্দেশনা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ