
ছবি: সংগৃহীত
ইনকাম ট্যাক্স অফিসে চলমান আন্দোলনের সঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপি’র কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, বিএনপি কখনো এই ধরনের কর্মসূচির অনুমোদন দেয়নি এবং যে চক্রটি এই আন্দোলনে বিএনপির নাম ব্যবহার করছে, তারা প্রকৃতপক্ষে দলের কেউ নয়। একটি সুবিধাভোগী মহল নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে বিএনপির নামকে ব্যবহার করে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে।
শুক্রবার (২৭ জুন) রাজধানীর নয়া পল্টনে ঢাকা মহানগর পূজা উদযাপন ফ্রন্ট আয়োজিত রথযাত্রা উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব মন্তব্য করেন রিজভী। সেখানে তিনি দলের অবস্থান পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেন এবং নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সতর্কবার্তাও উচ্চারণ করেন।
রিজভী আহমেদ বলেন, “ইনকাম ট্যাক্স অফিসে যারা আন্দোলন করছেন, তারা বিএনপির কেউ নয়। তারা দলের অনুমতি ছাড়াই এই ধরনের কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন এবং বিএনপির নাম ব্যবহার করছেন। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই—এই আন্দোলনের দায়দায়িত্ব বিএনপি নেবে না। দল এ ধরনের কর্মসূচিকে সমর্থন করে না।”
তিনি আরও বলেন, “বিএনপির আন্দোলন হচ্ছে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জনগণের ভোটের অধিকার ফেরানোর জন্য। কোনো গোষ্ঠী যদি নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করতে বিএনপির নাম ব্যবহার করে, সেটি শুধু অনৈতিক নয়, বরং রাজনৈতিকভাবে অপরাধও বটে।”
রিজভী এই ধরনের গোষ্ঠীর কার্যক্রমকে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আখ্যায়িত করে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান—এদের চিহ্নিত করে দূরে রাখার জন্য। তিনি বলেন, “আমাদের সংগ্রাম দীর্ঘদিনের। এই সংগ্রাম রক্ত দিয়ে অর্জিত। কোনো ষড়যন্ত্রকারী চক্র যেন সেটাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে না পারে, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।”
আলোচনায় আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে রিজভী বলেন, দেশের সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম হাবিবুল আউয়ালের সাম্প্রতিক এক মন্তব্য থেকেই প্রমাণিত হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ। তার ভাষায়, “প্রাক্তন সিইসি নিজেই স্বীকার করেছেন যে বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। অর্থাৎ এটা প্রমাণ করে যে গত এক যুগের বেশি সময় ধরে এই দেশের জনগণ একটি অবৈধ নির্বাচনের শাসনভুক্ত ছিল।”
তিনি বলেন, “এ কথা বলার জন্য আমাদের আর বেশি কিছু দরকার নেই। এখন শুধু প্রয়োজন একটি নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার, যার অধীনে জনগণ তাদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে পাবে।”
দেশের চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে রিজভী আহমেদ আবারও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানান। তিনি বলেন, “এখন আর শুধু ক্ষমতার পালাবদল নয়, আমাদের আন্দোলনের লক্ষ্য হলো সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। এই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছাড়া বিকল্প নেই। তা সম্ভব কেবল একটি নির্দলীয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনেই।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমান শাসকগোষ্ঠী একদলীয় শাসন কায়েম করেছে। বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে প্রশাসন—সবকিছু দলীয়করণ করে জনগণের অধিকার হরণ করা হয়েছে। বিএনপি সেই দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে।”
বক্তব্যের শেষভাগে রিজভী আশাবাদ ব্যক্ত করেন, বিএনপির চলমান আন্দোলন সফল হবে এবং তা ভবিষ্যতের একটি গণতান্ত্রিক ভিত্তি রচনা করবে। তিনি বলেন, “যে রক্ত ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, সেই সুযোগই ভবিষ্যতের জন্য সত্যিকারের গণতন্ত্রের ভিত্তি তৈরি করবে।”
তিনি সকল রাজনৈতিক শক্তি ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “এই সংগ্রাম শুধু বিএনপির নয়, এটি দেশের সমস্ত গণতন্ত্রকামী মানুষের আন্দোলন। এজন্য দরকার জাতীয় ঐক্য, প্রয়োজন ঐতিহাসিক উপলব্ধি।”
এই আলোচনা সভায় দলীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন পেশাজীবী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং ধর্মীয় সংগঠনের নেতারাও। বক্তারা দেশজুড়ে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান।
বাংলাবার্তা/এমএইচ