
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম সেরা তারকা সাকিব আল হাসান দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে রয়েছেন। গত বছরের আগস্ট মাসে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষিতে দেশ ত্যাগ করার পর থেকে জাতীয় দলের বাইরে আছেন তিনি। তবে তাঁর পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা কাটছে না। এই বিষয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও জাতীয় দলের সহকারী কোচের মন্তব্য নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
গত বছর ৫ আগস্ট, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা তীব্র হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনের দাবিতে উত্তাল ছিল দেশের পরিস্থিতি। এই সময় রাজনৈতিক কারণে বিপদে পড়েন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় নেতা ও কর্মীরা, যার মধ্যে মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানও রয়েছেন। আওয়ামী লীগের পতনের পর তার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলাও দায়ের করা হয়, যার কারণে সাকিব গ্রেফতার এড়িয়ে বিদেশেই অবস্থান করছেন।
এরপর থেকে জাতীয় দলে সাকিবের অবর্তমানতা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে দেশের বাইরে থাকার ফলে তার ক্রিকেট ক্যারিয়ার সংকটের মুখে পড়েছে। এই পরিস্থিতি নিয়েও ক্রিকেট বোর্ডের এবং কোচিং স্টাফের নানা মতামত প্রকাশ পাচ্ছে।
জাতীয় দলের সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্টভাবে বলেছেন, “এটা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। বোর্ডও কিছু করতে পারবে বলে মনে হয় না। এটা সরকারি নীতি, তাদের ওপর নির্ভর করে। বোর্ডেরও কিছু করার নেই। যখন সরকার মনে করবে, তখনই সে আসতে পারবে। না হলে আসলে... তাকে ক্রিকেট খেলতে দেশে আসতে হবে।”
সালাউদ্দিন আরও জানান, “সাকিবকে জাতীয় দলে ফেরানো নিয়ে আমাদের খুব বেশি চিন্তা করার কিছু নেই। হয়তো সেভাবে সে মেনে নেবে। বা কখনো যদি সে ফিরে আসতে পারে, সবাই চাই আসুক। এটা নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।”
এখানে বোর্ড ও কোচিং স্টাফের দৃষ্টিভঙ্গি প্রমাণ করে যে, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সরকারের সিদ্ধান্ত ছাড়া সাকিবের ফেরা এখন সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নতুন সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলও সাকিবের ফেরার বিষয়ে সরাসরি কিছু জানাতে পারেননি। তিনি বলেছেন, “সাকিবের ফেরার বিষয়ে বোর্ডে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। ক্রিকেটের বাইরের আলোচনা আমরা এত বেশি করছি না।”
অন্যদিকে বিসিবি পরিচালক ও সাবেক ক্রিকেটার ইফতেখার রহমান মিঠু বলেন, “বাংলাদেশের গ্রেটেস্ট ক্রিকেটার হচ্ছেন সাকিব আল হাসান। এখানে কোনো সেকেন্ড চয়েস নেই। তার জন্য দরজা সবসময় খোলা। এটা নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্টের ওপর, তারা চিন্তা করছে।”
সাকিব আল হাসান দেশের ক্রিকেটে অসামান্য অবদান রেখে আসছেন। তার অভাব জাতীয় দলে স্পষ্ট। তবে তার রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত অবস্থান দেশের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হওয়ায় তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বিসিবি এবং জাতীয় দলের ম্যানেজমেন্ট যদিও তার প্রতি অপেক্ষা করছে, কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীলতার কারণে তার ফেরা দীর্ঘ সময়ের জন্য বিলম্বিত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাকিবের অনুপস্থিতিতে দল বেশ কিছু বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে, বিশেষ করে মিডল-অর্ডার ব্যাটিং ও মিডল-অর্ডার স্পিনিং বিভাগে। তাই তার ফিরে আসা জাতীয় দলের জন্য এক বড় সহায়তা হবে। তবে তার প্রতি বিরূপ রাজনৈতিক মামলা ও নিরাপত্তার উদ্বেগ ফেরা প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলেছে।
সাকিব আল হাসানের ক্রিকেট ক্যারিয়ার এখন এক কঠিন মোড়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। জাতীয় দলের সহকারী কোচ থেকে শুরু করে বোর্ড সভাপতি ও পরিচালকরা সবাই তার প্রতি আশাবাদী হলেও সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে। দেশের ক্রিকেট প্রেমীরা আশা করেন, শীঘ্রই তিনি ফিরবেন মাঠে, এবং আবারো তার ছন্দে জুড়বে বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রাণ।
যতদিন না সরকারের সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত আসে, ততদিন পর্যন্ত সাকিবের দেশের মাটিতে ফিরার সম্ভাবনা রহস্যময়তার ঘেরাটোপে থাকবে। ক্রিকেট বোর্ড ও কোচিং স্টাফের পক্ষ থেকে বোঝা যাচ্ছে, তারা সর্বদা প্রস্তুত, কিন্তু সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই।
বাংলাবার্তা/এমএইচ