
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনায় অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ঢাকার একটি আদালত। আদালতের এ আদেশের ফলে দলীয় কার্যক্রমে জি এম কাদেরের সরাসরি অংশগ্রহণ আপাতত স্থগিত হয়ে গেল। একইসঙ্গে তার সিদ্ধান্তে বহিষ্কৃত দলের শীর্ষ নেতাদের স্বপদে পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (৩০ জুলাই) ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম এই আদেশ দেন। এরপর বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) জাতীয় পার্টির দফতর সম্পাদক এম এ রাজ্জাক খানের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়।
আদালতের আদেশে বলা হয়, জাপার সাবেক ১০ শীর্ষ নেতার করা এক মামলার পরিপ্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান জি এম কাদের আপাতত কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে পারবেন না। এই আদেশ মূলত একটি অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা, যার মাধ্যমে আদালত দলীয় শৃঙ্খলা ও নেতৃত্ব নিয়ে চলমান দ্বন্দ্বের একটি নিরপেক্ষ সমাধান খুঁজে পেতে উদ্যোগ নিয়েছে।
জানা গেছে, জি এম কাদের সম্প্রতি দলের একাধিক সিনিয়র নেতাকে বহিষ্কার করেছিলেন, যার মধ্যে রয়েছেন দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। তবে আদালতের আদেশে বলা হয়, এসব বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত স্থগিত থাকবে এবং সংশ্লিষ্ট নেতারা তাদের স্বপদে বহাল থাকবেন।
জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও নেতৃত্ব সংকট গত কয়েক মাসে অনেকটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দলটির বিভিন্ন জেলায় সংগঠনের কার্যক্রমে স্থবিরতা এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করে। জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে দলীয় গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা আদালতের দ্বারস্থ হন। এর ফলেই এই মামলার উদ্ভব এবং আদালতের এই নির্দেশনা।
জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, বহিষ্কৃত নেতারা দীর্ঘদিন ধরেই জি এম কাদেরের একক সিদ্ধান্ত ও ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তারা অভিযোগ করেন, জি এম কাদের নিয়ম না মেনে দল পরিচালনা করছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোতে কাউকে বিশ্বাস করেন না। আদালতের এই আদেশকে তারা “বিচারের বিজয়” হিসেবে দেখছেন।
এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত জি এম কাদেরের সরাসরি কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তার ঘনিষ্ঠরা বলছেন, এই আদেশ সাময়িক এবং এটি আইনিভাবে মোকাবিলা করা হবে। তারা দাবি করছেন, মামলাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং এতে রাজনৈতিক প্রভাব থাকতে পারে। দলের এক সিনিয়র নেতা বলেন, “এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য আদালতকে ব্যবহার করা হলে তা নিয়ে প্রশ্ন থাকবে।”
জাতীয় পার্টির এই সংকট দলের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে অংশগ্রহণ ও প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। দলটি ইতোমধ্যে ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক ভারসাম্য পুনর্গঠনের গুরুত্বপূর্ণ সময়েও বিভাজনের শিকার হয়েছে। এখন আবার নতুন করে আদালতের নিষেধাজ্ঞা এবং নেতাদের মাঝে বিভাজন দলটির সাংগঠনিক কাঠামো ও জনভিত্তিকে দুর্বল করে তুলছে।
একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন, জাতীয় পার্টি দীর্ঘদিন ধরে দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে চলছে—একটি অংশ নেতৃত্বে স্থায়িত্ব ও আধুনিকায়নের পক্ষে, অপরটি ঐতিহ্যগত নেতাদের হাতে নেতৃত্ব ফিরিয়ে দিতে চায়। এই দ্বন্দ্বের অবসান না ঘটলে দলটির রাজনৈতিক অস্তিত্ব ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
সব মিলিয়ে, জি এম কাদেরের ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে আরও উন্মোচিত করেছে। সামনে কী ঘটে, তা নির্ভর করবে আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এবং দলীয় নেতাদের ঐক্যমত্যের সম্ভাবনার ওপর।
বাংলাবার্তা/এমএইচ