
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকার শেয়ারবাজার ডিএসইতে ১১ মাস পর প্রথমবারের মতো হাজার কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার লেনদেনের মোট মূল্য হয়েছে এক হাজার ৬৩ কোটি টাকা, যা গত বছরের সেপ্টেম্বরের পর থেকে সর্বোচ্চ এবং আগের দিনের তুলনায় ৩২০ কোটি টাকা বেশি। এর ফলে শেয়ারবাজারে উৎসাহ ও আস্থার নতুন সংযোজন ঘটেছে।
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্সও গত বছরের অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে, ৯১ পয়েন্ট বেড়ে ৫৪৪৩ পয়েন্ট ছাড়িয়েছে। সূচকের বৃদ্ধি হার ছিল ১.৭০ শতাংশ। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শেয়ারবাজার চট্টগ্রামের সিএসইর প্রধান সূচক সিএসসিএক্স ১৮৩ পয়েন্ট বা দুই শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ৯৩২৫ পয়েন্ট ছাড়িয়েছে।
শেয়ারবাজারে বড় ধরনের সূচক বৃদ্ধির পেছনে ব্যাংক খাতের অবদান সবচেয়ে বেশি। ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৩৫৫ কোম্পানি এবং ৩৬টি মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার কেনাবেচার মধ্যে ব্যাংক খাতের ৩৫ কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৮৬ কোটি টাকার, যা মোট লেনদেনের প্রায় ৩৬ শতাংশ। এই খাতের ২৬টির শেয়ার দর বেড়েছে, ৫টির কমেছে, বাকি চারটি অপরিবর্তিত রয়েছে। যদিও পাঁচটি ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে, তবুও মোট মিলিয়ে ব্যাংক খাতের গড় শেয়ারদর ২.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ডিএসইএক্স সূচকে প্রায় ৫২ পয়েন্ট যোগ করেছে।
ওষুধ ও রসায়ন খাতও শেয়ার বাজারের উঠানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। মোট ১২৯ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে এই খাতে, যা মোটের ১২ শতাংশের কাছাকাছি। বিশেষ করে স্কয়ার ফার্মা ও বেক্সিমকো ফার্মা যৌথভাবে প্রায় ১৫ পয়েন্ট সূচক বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।
যদিও সূচক ও লেনদেনে ইতিবাচক বৃদ্ধি দেখা গেলেও বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে। গতকাল ডিএসইতে ৩৫৫টির মধ্যে ১৩৯টির শেয়ার দর বৃদ্ধি পেয়েছে, ১৫৯টির কমেছে এবং ৫৭টির অপরিবর্তিত রয়েছে। মিউচুয়াল ফান্ডের ৩৬টির লেনদেন হয়েছে, যার মধ্যে ১১টির দর বেড়েছে, ৬টির কমেছে এবং ১৯টির অপরিবর্তিত রয়েছে।
শেয়ার বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত সপ্তাহে কিছু দিন দর সংশোধনের ধারা চললেও বুধবার ও বৃহস্পতিবার সূচক ফের ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। গত ২৯ মে থেকে সূচকের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা উল্লেখ করছেন, অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের উন্নতি ও বাজারে বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস শেয়ারবাজারে নতুন প্রাণ ঢুকিয়েছে। বিশেষ করে কৌশলী বিনিয়োগকারীরা আগেই বিনিয়োগ শুরু করায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও আস্থা বেড়েছে। অনেকেই বিশ্বাস করেন, শেয়ারবাজারে এখন থেকে লোকসানের ঝুঁকি কম, তাই তারা বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছে।
প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান জানান, সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকের উন্নতি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকা, ট্রেজারি বন্ডে সুদের হ্রাস এবং ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদহার কমানোর প্রবণতা বিনিয়োগকারীদের শেয়ারবাজারে আকৃষ্ট করেছে। তিনি বলেন, ‘এফডিআর ভাঙা এবং ট্রেজারি বন্ড বিক্রির মাধ্যমে অনেকেই শেয়ারবাজারে আসছেন।’
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ সময় শেয়ারবাজারে দর পতনের পর সাম্প্রতিক উত্থান সুস্থ এবং মৌলিকভাবে সমর্থিত। অপেক্ষাকৃত দুর্বল শেয়ারগুলোর দর বৃদ্ধি বেশি হওয়ায় বাজারের গুণগতমানও উন্নত হচ্ছে। বিশেষ করে ব্যাংক খাতের নেতৃত্বে মৌলিক খাতগুলোতে বিনিয়োগ বাড়ছে, যা বাজারকে প্রাণবন্ত করে তুলেছে।
সার্বিকভাবে বলা যায়, ১১ মাস পর হাজার কোটি টাকার লেনদেন এবং প্রায় ৫ শতাংশেরও বেশি সূচক বৃদ্ধি দেশের শেয়ারবাজারে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। তবে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার পরামর্শও শোনা যাচ্ছে কারণ লেনদেন ও সূচকের ঊর্ধ্বমুখী গতির মাঝেও অনেক কোম্পানির শেয়ার দর কমার পরিসংখ্যান উদ্বেগজনক। বাজারের টেকসই উন্নতির জন্য দীর্ঘমেয়াদী ও সুস্থ বিনিয়োগ ও নীতিগত স্থিতিশীলতা অপরিহার্য বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ