
ছবি: সংগৃহীত
ইসলামে হজ ও ওমরাহ দুটোই অত্যন্ত মহৎ ইবাদত। তবে অনেকেরই প্রশ্ন থাকে, যারা এখনো হজ করার সামর্থ্যে নেই, তাদের জন্য ওমরাহ করা কি ফরজ বা ওয়াজিব? এছাড়া ওমরাহ করার নির্দিষ্ট সময়, ওমরাহ করলে হজ ফরজ হয়ে যায় কিনা—এসব বিষয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। এই প্রতিবেদনটি সেই সব প্রশ্নের সঠিক এবং বিস্তারিত জবাব দেবে।
প্রথমেই বলা যায়, হজ ফরজ হলেও ওমরাহ ফরজ নয়। তবে ওমরাহ করা ইসলামি শাস্ত্রে সুন্নত মুআক্কাদাহ, অর্থাৎ খুব জোরালো সুন্নত, যা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিয়মিত অনুশীলনের অংশ ছিল। যার অর্থ, যদি ওমরাহ করার সামর্থ্য থাকে তবে একবার জীবনে এটি করা উত্তম এবং প্রিয় আমল।
যারা এখনো হজ করার সামর্থ্য অর্জন করেননি কিন্তু ওমরাহ করার সক্ষমতা রাখেন, তাদের জন্য ওমরাহ করা সুন্নত এবং অত্যন্ত প্রস্তাবিত। এটি ফরজ নয়, তবে করা উচিত। অর্থাৎ, ওমরাহ করার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি হজের দায়িত্ব থেকে মুক্ত হবে না। হজ আলাদা একটি ফারজ ইবাদত, যা শরীর ও অর্থের সামর্থ্য থাকলে মুসলমানের জন্য আবশ্যক।
ওমরাহ করার জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময় নির্ধারিত নেই। বছরের যেকোনো সময়ে ওমরাহ করা জায়েজ এবং গ্রহণযোগ্য। তবে একমাত্র যিলহজ মাসের ৯ তারিখ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত, অর্থাৎ হজের মৌসুমের পাঁচ দিনের মধ্যে ওমরাহ করা মাকরূহ (অপছন্দনীয়) বিবেচিত হয়, কারণ তখন মুসলিম উম্মাহর অধিকাংশ মানুষ হজের জন্য মক্কায় অবস্থান করে। এই সময়ে ওমরাহ করার প্রচেষ্টা করা ঠিক নয়।
রমজান মাসে ওমরাহ করা সবচেয়ে উত্তম ও মহিমান্বিত কাজ হিসেবে বিবেচিত। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, "রমজানে একটি ওমরাহ করা আমার সঙ্গে একটি হজ করার সমতুল্য" (সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ১৮৬৩)। এই hadith থেকে বোঝা যায় রমজানে ওমরাহর আলাদা মর্যাদা রয়েছে।
অনেকে মনে করেন, যদি কেউ কাবা শরীফ দেখেন তবে তার ওপর হজ ফরজ হয়ে যায়। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। হজ ফরজ হওয়ার শর্ত হলো: শরীরিক সক্ষমতা থাকা, অর্থের সক্ষমতা থাকা, এবং হজের নির্দিষ্ট মৌসুমে (যিলহজ মাসে) যাওয়ার জন্য সময় ও প্রয়োজনীয় যাবতীয় খরচ সাপেক্ষে প্রস্তুতি থাকা। কেবলমাত্র কাবা শরীফ দেখা দিয়ে হজ ফরজ হয়ে যায় না।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ওমরাহ ভিসায় যাত্রা করলে হজের ভিসা পাওয়া যায় না। অর্থাৎ, ওমরাহ করতে গিয়ে সরাসরি হজের ভিসায় থাকা বা হজ পালন করা আইনি নয় এবং ইসলামি শরীয়তের দিক থেকেও অনুমোদিত নয়। তাই যারা ওমরাহ করতে যাচ্ছেন, তাদের উচিত নির্দিষ্ট নিয়ম ও ভিসা নিয়ম মেনে চলা।
সংক্ষেপে:
-
ওমরাহ ফরজ নয়, তবে জীবনেও অন্তত একবার ওমরাহ করা সুন্নত মুআক্কাদাহ।
-
ওমরাহ করার জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই, তবে হজের মৌসুম (৯-১৩ যিলহজ) এর মধ্যে ওমরাহ করা মাকরূহ।
-
রমজান মাসে ওমরাহ করা অনেক বেশি সওয়াবের কাজ।
-
কাবা শরীফ দেখা হজ ফরজ করার শর্ত নয়।
-
ওমরাহ ভিসায় যাত্রা করলে হজ করা যায় না।
সুতরাং, যারা হজের সামর্থ্য রাখেন না কিন্তু ওমরাহ করার সুযোগ রয়েছে, তাদের জন্য ওমরাহ করা উত্তম ও সুন্নত। তবে ওমরাহ করার মাধ্যমে হজের ফ্রজিয়ত পূরণ হয় না। ভবিষ্যতে শারীরিক ও আর্থিক সক্ষমতা অর্জিত হলে হজ অবশ্যই পালিত করতে হবে।
আপনি ওমরাহ করতে পারেন যেকোনো সময়, তবে ধর্মীয় নিয়ম-নীতির প্রতি সম্মান রেখে যথাযথ ভিসা ও অনুমতি নিয়ে এটি করুন। ওমরাহ পালন করলে ইবাদতের এই মহান ফজিলত উপভোগ করুন এবং পরবর্তী সময়ে হজের প্রস্তুতি রাখুন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ