
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গতকাল বৃহস্পতিবার একযোগে ৪৯ জন কর্মকর্তাকে বদলি করেছে, যা দেশের কর প্রশাসনে এক বড় ধরনের ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। বদলি হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে ২৫ জন অতিরিক্ত কমিশনার এবং ২৪ জন যুগ্ম কমিশনার রয়েছেন। এই বদলির জন্য কাস্টমস ও ভ্যাট প্রশাসন-১ শাখার দ্বিতীয় সচিব মোহাম্মদ আবুল মনসুর স্বাক্ষরিত পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বদলি একটি নিয়মিত প্রশাসনিক প্রক্রিয়া হলেও এই মাত্রায় একসঙ্গে বদলি হওয়া বিরল এবং তা নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে।
বদলিকৃত কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকেই গত কিছু সময় ধরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্তি ও চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবির আন্দোলনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। এছাড়াও, বেশ কয়েকজন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। গত কয়েক মাস ধরে এনবিআরের ভেতরে আন্দোলনের তীব্রতা বেড়েছে, যা কর প্রশাসনের কাজে প্রভাব ফেলছিল। এসব কারণে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বদলি এবং কিছু কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করার পরিপ্রেক্ষিতে এই বদলি কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে বলে জানা গেছে।
বদলিকৃত ২৫ অতিরিক্ত কমিশনারের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন— মির্জা সহিদুজ্জামান, প্রমীলা সরকার, শামীমা আক্তার, মো. খায়রুল কবির মিয়া, ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, ড. মো. নেয়ামুল ইসলাম, আবুল আ’লা মোহাম্মদ আমিনুল ইহসান, মোহাম্মদ মুশফিকুর রহমান, নাহিদ নওশাদ মুকুল, মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, মো. মিলন শেখ, মোহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন পাহলোয়ান, মো. জিয়াউর রহমান খান, মো. রুহুল আমিন, আব্দুল রশীদ মিয়া, সাধন কুমার কুন্ডু, মোছা. শাকিলা পারভীন, খোজিস্তা আখতার, মোহাম্মদ মাহবুব হাসান, নুসরাত জাহান, মোহাম্মদ বাপ্পী শাহরিয়ার সিদ্দিকী, রাকিবুল হাসান, রাফিয়া সুলতানা, রেজভী আহ্মেদ ও কামনাশীষ।
একই সঙ্গে বদলি হওয়া ২৪ যুগ্ম কমিশনার হলেন— মোহাম্মদ ছালাউদ্দিন রিপন, শাহীনূর কবির পাভেল, সারমিন আক্তার মজুমদার, হাসনাইন মাহমুদ, জাহাঙ্গীর আলম, মোহাম্মদ সালাউদ্দিন রিজভী, মো. মিজানুর রহমান, মো. পায়েল পাশা, মো. নূর উদ্দিন লিমন, তাহমিনা আক্তার পলি, মো. শাকিল খন্দকার, স্নিগ্ধা বিশ্বাস, লুবনা ইয়াসমীন, মোহাম্মদ নাহিদুন্নবী, মো. খায়রুল আলম, নিতীশ বিশ্বাস, চপল চাকমা, সুশান্ত পাল, মো. রিয়াজুল ইসলাম, মো. পারভেজ রেজা চৌধুরী, অথেলা চৌধুরী, মো. সানোয়ারুল কবির, কাজী ইরাজ ইশতিয়াক ও ছৈয়দুল আলম।
বদলিকৃত এসব কর্মকর্তা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত এনবিআরের বিভিন্ন দপ্তরে কর্মস্থল পরিবর্তন করেছেন। তাদের বেশিরভাগকে এনবিআরের বর্তমান কর্মক্ষেত্র থেকে সরিয়ে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে।
গত কয়েক মাসে এনবিআর বিলুপ্তি এবং বর্তমান চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। এই আন্দোলনে যুক্ত থাকার অভিযোগে এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এনবিআরের ১৬ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে। অনুসন্ধানাধীন কর্মকর্তাদের মধ্যে বদলি হওয়াদের উপস্থিতি এক ধরনের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপের চিত্রও ফুটে তোলে।
এনবিআরের মত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান থেকে একসঙ্গে এত সংখ্যক কর্মকর্তার বদলি প্রশাসনিক কাজে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এনবিআরের দক্ষতা ও নৈতিকতা বজায় রাখতে সুপরিকল্পিত সংস্কার দরকার। বদলির পাশাপাশি মূল সমস্যা, যেমন অবৈধ লেনদেন, দুর্নীতি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ইত্যাদি থেকে মুক্তি দিতে হবে।
সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ রয়েছে, যেন এনবিআরের পুনর্গঠন কার্যক্রম কেবল বদলি বা বরখাস্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে মূল কাঠামোগত সংস্কার ঘটায়। এতে দেশের রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ