
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগী সংখ্যা এবং মৃতের সংখ্যা জুলাই মাসে উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছেছে। চলতি বছরের জুলাই মাসে দেশে ডেঙ্গু জ্বরের তীব্র প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, যার ফলে মাত্র এক মাসেই ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন হাজার হাজার রোগী। বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
গত একদিনে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত আরও ২৭৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন এবং একই সময়ে ২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর আগে জুলাই মাসের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১০ হাজার ৬৮৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং মোট ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
২০২৪ সালের শুরু থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২০ হাজার ৯৮০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৮৩ জনের। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে বরিশাল বিভাগে যেখানে ৭ হাজার ৯৪২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন এবং ১৬ জনের মৃত্যু ঘটেছে। অন্যদিকে, মৃত্যুর সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি হয়েছে রাজধানী ঢাকায়, যেখানে ৪৬ জন ডেঙ্গু জ্বরে মারা গেছেন এবং ৪ হাজার ৫৪০ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি রোগীদের মধ্যে ঢাকা মহানগরে ৬৩ জন, বরিশালে ৭২ জন, ঢাকার বাইরে ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় ৪৬ জন, চট্টগ্রামে ৩৫ জন, রাজশাহীতে ৩৫ জন, খুলনায় ১৮ জন, ময়মনসিংহে ৪ জন এবং রংপুরে ৫ জন রয়েছেন। তবে সিলেট থেকে কোনো নতুন রোগীর তথ্য পাওয়া যায়নি। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ১ হাজার ২৬২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন, যার মধ্যে ৯২১ জন ঢাকা মহানগরের বাইরে এবং ৩৪১ জন ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বছরের শুরু থেকে মাসভিত্তিক ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, জানুয়ারি মাসে ১ হাজার ১৬১ জন ভর্তি হয়েছিল এবং মৃত্যু হয়েছিল ১০ জনের। ফেব্রুয়ারি ও মার্চে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা তুলনামূলক কম ছিল; ফেব্রুয়ারি মাসে ৩৭৪ জন আক্রান্ত ও ৩ জনের মৃত্যু, মার্চে ৩৩৬ জন আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা হয়নি। এপ্রিল মাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৭০১ জন এবং মৃত্যু হয় ৭ জনের। মে মাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ হাজার ৭৭৩ জন ও মৃত্যু হয়েছিল ৩ জনের। জুন মাসে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ে, যেখানে ৫ হাজার ৯৫১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন এবং ১৯ জনের মৃত্যু ঘটে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২০০০ সাল থেকে সংরক্ষিত তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গু রোগে সর্বোচ্চ আক্রান্ত হয়েছিল ২০২৩ সালে, যেখানে ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল এবং ১ হাজার ৭০৫ জন মারা গিয়েছিল। ২০২৪ সালের প্রথম ৭ মাসে ইতোমধ্যে ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং মৃত্যুর সংখ্যা ৫৭৫ জনে পৌঁছেছে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, দ্রুত চিকিৎসা ব্যবস্থা ও পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা এখন সময়ের দাবি। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ডেঙ্গু বংশবিস্তারকারি মশার নিবাসস্থল ধ্বংস করতে হবে এবং শারীরিক অসুস্থতা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা নিতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও ইতিমধ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ বৃদ্ধিতে কাজ করছে।
সরকারি পর্যায়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও, বর্ষাকাল জুড়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষা পেতে নাগরিকদের আরও সচেতন ও সজাগ থাকতে হবে। বিশেষ করে বাড়ির আশপাশে পানি জমা রোধ, মশারি ব্যবহার এবং ডেঙ্গু লক্ষণ সম্পর্কে অবগত থাকা জরুরি।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে যথাযথ কার্যক্রম অব্যাহত রাখাই সময়ের বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা অপরিহার্য।
সংক্ষেপে:
-
জুলাইয়ে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৪১ জন, আক্রান্ত হাসপাতালে ভর্তি ১০,৬৮৪ জন।
-
চলতি বছরে মোট ৮৩ জন ডেঙ্গুতে মারা গেছে, আক্রান্ত ২০,৯৮০ জন।
-
বরিশালে সর্বোচ্চ আক্রান্ত, ঢাকায় সর্বোচ্চ মৃত্যু।
-
ডেঙ্গু প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা ও জনসচেতনতা জরুরি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ