
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন মেজর পদমর্যাদার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার গুরুতর অভিযোগে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা, নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্ব রক্ষার অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
শুক্রবার (১ আগস্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর জানায়, একটি গোপন রাজনৈতিক বৈঠকে অংশগ্রহণের অভিযোগে সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা বর্তমানে সেনা হেফাজতে রয়েছেন এবং তার বিরুদ্ধে বহুমাত্রিক তদন্ত কার্যক্রম চলছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে সেনাবাহিনীর কাছে তথ্য আসে যে, একজন সেনা কর্মকর্তা নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক দলের (আওয়ামী লীগ) একটি গোপন বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছেন। এ বৈঠকে দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়।
গোপন সূত্রে প্রাপ্ত এই অভিযোগের ভিত্তিতে সেনাবাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি ‘সর্বোচ্চ গুরুত্বে’ বিবেচনায় নেয় এবং অভিযোগের যথার্থতা যাচাইয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্তের উদ্যোগ নেয়।
এরই ধারাবাহিকতায়, গত ১৭ জুলাই, রাজধানীর উত্তরা এলাকার নিজ বাসস্থান থেকে ওই সেনা কর্মকর্তাকে আটক করে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়।
অভিযোগ প্রমাণের প্রাথমিক পর্যায়েই তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার সত্যতা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।
এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি তদন্ত আদালত (Court of Inquiry) গঠন করা হয়েছে, যার কাজ হবে বিষয়টির গভীর তদন্ত এবং সংশ্লিষ্ট সব তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নির্ধারণ করা।
সেনাবাহিনীর বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে, প্রাথমিক তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত হওয়ায় পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষে সেনা আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমন্বয়ও করা হচ্ছে।
একইসঙ্গে, ওই কর্মকর্তার কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়েও আলাদা একটি তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে। এ তদন্ত শেষে তার বিরুদ্ধে সেনা আইনের ধারা অনুযায়ী ‘Command Responsibility’-এর আওতায় দায় নির্ধারণ করা হবে এবং পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আইএসপিআরের বিবৃতিতে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক, শৃঙ্খলাপরায়ণ ও পেশাদার প্রতিষ্ঠান, যেখানে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রকার সুযোগ নেই এবং থাকবে না।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, “সেনাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে পেশাদারিত্ব, সাংবিধানিক দায়িত্ববোধ এবং শৃঙ্খলার চর্চা বজায় রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বদা বদ্ধপরিকর। কোনো সদস্য এই মানদণ্ড থেকে বিচ্যুত হলে, তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন ও বিধি অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সামরিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সেনাবাহিনীর এই পদক্ষেপ একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করে—যে কোনো প্রকার রাজনৈতিক কার্যকলাপে জড়িত সদস্যদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করা হবে।
বিশেষ করে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংবেদনশীলতা ও সামরিক বাহিনীর নিরপেক্ষ ভূমিকার প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনীর এই তদন্ত আদালত গঠন সামরিক শৃঙ্খলার দৃষ্টিকোণ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও নজিরবিহীন পদক্ষেপ বলেও মনে করছেন অনেকেই।
বাংলাদেশের ইতিহাসে রাজনীতির সঙ্গে সামরিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ নতুন নয়। তবে আধুনিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজনীতি থেকে নিজেকে দূরে রেখে পেশাদারিত্বের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
এই ঘটনার তদন্ত ও আইনি প্রক্রিয়ায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা সেই মানদণ্ড বজায় রাখার প্রত্যয়ই পুনর্ব্যক্ত করছে।
সেনাবাহিনী তার নিজস্ব শৃঙ্খলা, নীতিমালা ও সাংবিধানিক দায়িত্বের প্রতি সর্বদা সচেতন। এই তদন্ত প্রক্রিয়া দেশের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা ও আস্থার পরিবেশ বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ