
ছবি: সংগৃহীত
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় খাদ্য সংগ্রহের চেষ্টা করতে গিয়ে মাত্র দুই দিনের মধ্যে ১০০ জনেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও শতাধিক। এই হতাহতের খবর দিয়েছে জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় অফিস (ওসিএইচএ) এবং জাতিসংঘের উপ-মুখপাত্র ফারহান হক। শুক্রবার (১ আগস্ট) তিনি সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন। খবরটি জানিয়েছে বার্তা সংস্থা আনাদোলো।
ফারহান হক জানান, গাজায় চলমান সংকটের মাঝে জীবন ধারণের জন্য খাদ্য সংগ্রহের চেষ্টা করতে গিয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন এবং আহত হচ্ছেন। বিশেষ করে ত্রাণবাহী যানবাহনের পথে অথবা ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের আশপাশে এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, “আমাদের মানবাধিকার সহকর্মীদের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই দিনে একশর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। পাশাপাশি শত শত মানুষ আহত হয়েছেন।”
জাতিসংঘের উপ-মুখপাত্র বলেন, গাজার জনগণের জন্য খাদ্য, পানি ও চিকিৎসাসহ মৌলিক মানবিক সরবরাহের অভাব দিন দিন আরও সংকটময় হয়ে উঠছে। খাদ্য সামগ্রী সংগ্রহের পথে মৃত্যুর ভয়াবহতা একটি মারাত্মক সংকেত এবং এটি মানবিক দুর্দশার মাত্রা নির্দেশ করে।
তিনি আরও বলেন, “খাবারের সন্ধানে কেউ জীবনের ঝুঁকি নেওয়া উচিত নয়। বেসামরিকদের সর্বদা সুরক্ষিত রাখতে হবে এবং কমিউনিটি স্তরের সাহায্য বিতরণ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।”
ফারহান হক বলেন, গাজায় ত্রাণবাহক দলগুলোর জন্য দ্রুত, নিরাপদ এবং অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। তবে, ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীন রুটগুলো প্রায়ই বিপজ্জনক, যানজটপূর্ণ এবং দুর্গম হওয়ায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। “আমাদের দলগুলোকে যে পথ দিয়ে যান চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়, সেগুলোতে নিরাপত্তা বজায় রাখা প্রায় অসম্ভব,” তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন।
২০১৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে ইসরাইলি সেনাবাহিনী অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে গাজায়। এই সময়কাল ধরে সংঘর্ষে অন্তত ৬০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে বড় অংশ নারী ও শিশু। অবিরাম বোমাবর্ষণ ও গোলাবর্ষণের ফলে গাজার অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত। উপত্যকাটি এখন এক তীব্র খাদ্য সংকট ও মৌলিক পরিষেবার অভাবে দুঃসহ অবস্থার মধ্যে রয়েছে।
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সংঘাত বন্ধ এবং অবরুদ্ধ গাজায় মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবাহের দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু ইসরাইল যুদ্ধবিরতির যে আহ্বানগুলো দিয়েছে, সেগুলো এখনও কার্যকর হয়নি।
মানবিক বিষয়ক সমন্বয় অফিসের এই উদ্বেগের মধ্যে গাজার পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতির জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বিশেষ আহ্বান জানানো হয়েছে। খাদ্য, ওষুধ এবং অন্যান্য জরুরি সামগ্রীর অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে না পারলে এ অবস্থা আরো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
ফিলিস্তিনি জনগণের জীবন রক্ষা এবং তাদের মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেওয়া না হলে, গাজায় মানবিক বিপর্যয় ও প্রাণহানির সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন জাতিসংঘ কর্মকর্তা ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
বাংলাবার্তা/এমএইচ