
ছবি: সংগৃহীত
কাস্টমসের চাকরি মানেই কোটিপতি। যদিও লোকমুখে এতোদিন এই প্রবাদ শুনলেও এবার সত্যি করেছেন কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন। বর্তমানে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে কর্মরত এই কর্মকর্তা। মাত্র ১ যুগের কর্মযজ্ঞে হয়েছেন শতকোটি টাকার মালিক। গ্রামে গড়ে তুলেছেন রাজপ্রাসাদ,ঢাকাতে করেছেন একাধিক প্লট,ফ্ল্যাট। চড়েন দামি গাড়িতে। স্ত্রী,সন্তান এবং আত্মীয়-স্বজনদের নামে গড়েছেন একাধিক সম্পত্তি।
বাংলাবার্তার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে কাস্টমস ও ভ্যাটের ১৪ ব্যাচের এই কর্মকর্তার এমনই তথ্য।
জানা যায়, ২০১৪ সালের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন আলতাফ হোসেন। এরপর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আলতাফ সবচেয়ে বেশি ঘুষ এবং অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড সহিদুল ইসলামের সময়ে। শুল্ক গোয়েন্দার তখনকার মহাপরিচালকের ডান হাত ছিলেন এই আলতাফ। এমনকি ক্যাডার অফিসারদেরও ডান হাত নিতেন তিনি। একদিকে ঘুষের মাধ্যমে অর্জন করতেন কোটি কোটি টাকা অন্যদিকে ক্ষমতার দাপটে মাটিতে পা পড়তো না এই রাজস্ব কর্মকর্তার।
শুল্ক গোয়েন্দায় আলতাফ থাকাকালীন শাহজালাল বিমানবন্দরের এয়ার ফ্রেইট ইউনিটে প্রায় ১ বছরের বেশি সময় ধরে ছিলেন। সেখানে থেকে কয়েক কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ গড়েছেন এই কর্মকর্তা। যা সবকিছু জানতো তখনকার শুল্ক গোয়েন্দা প্রধান। নিয়ম অনুযায়ী শুল্ক গোয়েন্দা দপ্তরে একটি পদে সর্বোচ্চ ৬ মাসের জন্য পদায়ন হয়ে থাকে। কিন্তু এই আলতাফের বিষয়ে কোন নিয়ম মানা হয়নি।
এই কর্মকর্তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জের ফুলহাতা গ্রামে। গ্রামে টাকার কুমির নামে সবার কাছে আলতাফ হোসেন পরিচিত। পৈত্রিক সূত্রে মোড়লগঞ্জের বাসিন্দা হলেও বর্তমানে তিনি মুন্সীগঞ্জের কোটায় সরকারি চাকরি করছেন বলেও তথ্য রয়েছে। যা দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তদন্ত করলে সবকিছু বেরিয়ে আসবে।
আরও জানা গিয়েছে, দশম গ্রেডের একজন সামান্য কর্মকর্তা হিসেবে যেখানে তার ঢাকা শহরে স্বাভাবিক জীবনযাপন করাই কষ্টকর সেখানে একাধিক ফ্ল্যাট ও প্লটের মালিক তিনি। তার গত ১১ বছরের চাকরিকালীন বেতন সর্বসাকুল্যে ৩০-৩৫ লাখ টাকার মতো। অথচ মালিক হয়েছেন কোটি কোটি টাকার। উল্লেখ্য যে, দশম গ্রেডের একজন কর্মকর্তার সর্বসাকুল্যে বেতন ৩৮,৬৪০ (আটত্রিশ হাজার ছয়শত চল্লিশ) টাকা।
সম্প্রতি এনবিআরে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আন্দোলনে এই আলতাফের ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতো। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিপদে ফেলার জন্য আলতাফ হোসেন ও তার সিন্ডিকেট এনবিআরের আন্দোলনে কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। আরআন্দোলনে সম্মুখ সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আন্দোলনে তার অংশগ্রহনের ভিডিও ফুটেজ গণমাধ্যমের কাছে রয়েছে।
জানা যায়, এনবিআর এর একজন সাবেক ক্ষমতাধর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সুপারিশে আলতাফের চাকরি হয়। ঐ কর্মকর্তার দাপটে তিনি এনবিআর এ অদম্য ক্ষমতাধর হয়ে উঠেন। শুধু তাই নয়, ঐ কর্মকর্তার নাম ভাঙ্গিয়ে দুর্নীতির মাস্টারমাইন্ডও বনে গিয়েছেন।
চাকরি জীবনে এই কর্মকর্তা কিশোরগঞ্জ, খুলনা, শুল্ক গোয়েন্দা ও সর্বশেষ চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে তার পদায়ন।
এদিকে বর্তমানে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই কর্মকর্তা চট্টগ্রামে যাওয়ার পর থেকে লাখ টাকা ছাড়া কোন ফাইল ছাড়েন না। সিএন্ডএফ এবং ব্যবসায়ীরা অনুরোধ করলেও তাদের ফাইল আটকে রেখে হয়রানি করেন। সম্প্রতি দুর্নীতির অভিযোগে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নতুন কমিশনার তাকে বদলিও করেছেন। যা নিয়ে এনবিআরে তদবীর শুরু করেছেন এই আলতাফ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, যাত্রাবাড়ির দনিয়ার ৩০০/১, পূর্ব রসুলপুর ঠিকানায় তার একটি আলিশান ফ্ল্যাট রয়েছে। রসুলপুরের মাস্টার বাড়িতে নির্মাণাধীন ১১ তলা ভবনের ৯ম তলায় তার আরও একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এছাড়াও স্ত্রী ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের নামে-বেনামে বিভিন্ন স্থানে সম্পদ ও ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে।
দুর্নীতির বিষয়ে রাজস্ব কর্মকর্তা আলতাফের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলাবার্তাকে বলেন, আমার দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে তাতে আপনার সমস্যা কোথায়? আমার আরও সম্পদ আছে। দুদক ডাকলে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করবো। এনবিআরকে টাকা দিয়ে কিনবো। লাগলে সবাইকে টাকা দিয়ে কিনবো। এনবিআরের সব কর্মকর্তা দুর্নীতিবাজ। আমি দুর্নীতি করলে সমস্যা কোথায়?
বাংলাবার্তা/এসজে