
ছবি: সংগৃহীত
গরম ও বর্ষার মৌসুম এলেই বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশেই মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত ও আতঙ্কের নাম ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়া। উভয় রোগই ভাইরাসজনিত এবং এদের বাহক একই মশা—এডিস প্রজাতির মশা। অনেকেই জানেন না, এই দুই রোগ একসঙ্গে একজন মানুষের শরীরে হতে পারে। অর্থাৎ কেউ চাইলে একইসঙ্গে ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন। এই ‘কোয়াইনফেকশন’ বা দ্বৈত সংক্রমণ শরীরে ভয়াবহ জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস দুইটি আলাদা, তবে উভয় ভাইরাসই বহন করে এডিস মশা। কোনো ব্যক্তি যদি এমন একটি মশার কামড়ে পড়েন যা উভয় ভাইরাস বহন করছে, কিংবা স্বল্প সময়ের ব্যবধানে দুইটি ভিন্ন সংক্রমণ ঘটে, তাহলে সেই ব্যক্তি একসঙ্গে দুই রোগেই আক্রান্ত হতে পারেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোইনফেকশন সাধারণত নগর এলাকায় বেশি দেখা যায়, যেখানে মশার ঘনত্ব বেশি এবং জনসংখ্যা ঘনবসতিপূর্ণ। আবার কখনো কখনো যারা দীর্ঘ সময় হাসপাতালে ছিলেন বা স্বাস্থ্যঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করেন, তাদের ক্ষেত্রেও এই ধরনের সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া—দুই রোগের উপসর্গে অনেকটা মিল থাকায় দ্বৈত সংক্রমণ শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। জ্বর, মাথাব্যথা, গায়ে ও হাড়ে ব্যথা, চোখের পেছনে চাপ, দুর্বলতা ইত্যাদি উভয় রোগেই সাধারণ উপসর্গ। তবে চিকুনগুনিয়ায় জয়েন্টে ব্যথা হয় বেশি এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হয়, অনেক সময় মাসের পর মাস ধরে জয়েন্টে সমস্যা টিকে থাকে। অন্যদিকে ডেঙ্গুতে প্লাটিলেট কমে যায় এবং হেমোরেজিক শক সিনড্রোম দেখা দিতে পারে।
যদি দুটো ভাইরাস একসঙ্গে শরীরে বাসা বাঁধে, তাহলে লক্ষণগুলো আরও তীব্র হয়ে দেখা দিতে পারে। এতে রক্তক্ষরণজনিত জটিলতা, শ্বাসকষ্ট, রেনাল বা হেপাটিক সমস্যা এবং নিউরোলজিকাল জটিলতা পর্যন্ত দেখা দিতে পারে।
একসঙ্গে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া হলে তা একজন রোগীর জন্য মারাত্মক বিপদের কারণ হতে পারে। কারণ চিকিৎসা ব্যবস্থায় কখন কোন উপসর্গকে প্রাধান্য দেওয়া হবে, সেটি নির্ধারণ কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়া দুই ভাইরাসের প্রতিক্রিয়া একে অপরকে প্রভাবিত করতে পারে, ফলে রোগের গতিপ্রকৃতি অপ্রত্যাশিত হতে পারে।
বিশেষ করে বয়স্ক মানুষ, শিশু, গর্ভবতী নারী এবং যাদের আগে থেকেই ডায়াবেটিস বা হৃদরোগ আছে, তারা ডাবল সংক্রমণে মারাত্মক জটিলতায় পড়তে পারেন।
এ ধরনের কোইনফেকশন প্রতিরোধে একমাত্র উপায় হলো এডিস মশার বিস্তার রোধ এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করা। প্রতিদিন বাড়ির চারপাশে জমে থাকা পানি ফেলে দেওয়া, ফুলের টব, টায়ার, কনডেনসারের নিচে বা এসির পানি জমে থাকতে না দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। দিনে ও রাতে মশারি ব্যবহার, মশা প্রতিরোধক লোশন ব্যবহার এবং হাত-পা ঢেকে রাখার পোশাক পরাও সহায়ক।
ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার কোনও নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই। চিকিৎসা মূলত উপসর্গভিত্তিক। তবে কোইনফেকশন হলে চিকিৎসকরা খুব সতর্কতার সঙ্গে রোগীর শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন এবং প্লাটিলেট কাউন্ট, ইউরিন আউটপুট, রক্তচাপ, লিভার ও কিডনির কার্যক্ষমতা নিয়মিত পরীক্ষা করেন। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেওয়াই অধিক নিরাপদ।
সতর্ক থাকুন, সুস্থ থাকুন। কোনো উপসর্গ দেখা দিলেই দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া একসঙ্গে হলে সময়ই হতে পারে জীবনরক্ষার সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ