
ছবি: সংগৃহীত
সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাটিতে এশিয়া কাপের আগে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানকে নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ আয়োজন করতে যাচ্ছে দেশটি। আসন্ন এশিয়া কাপের প্রস্তুতির জন্য এটিকে আদর্শ একটি মঞ্চ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কিন্তু, বিস্ময়ের ব্যাপার হলো—এই সুযোগের অংশ হতে পারল না বাংলাদেশ। দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের অনেকেই মনে করছেন, বিসিবির কূটনৈতিক দূরদৃষ্টির অভাব এবং সঠিক সময়ে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়াই এই সুযোগ হারানোর পেছনে মূল কারণ।
আগামী ২৯ আগস্ট থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শারজাহতে অনুষ্ঠিত হবে এই ত্রিদেশীয় সিরিজ, যার প্রতিটি ম্যাচই হবে একই ভেন্যুতে। ফাইনালসহ মোট সাতটি ম্যাচের এই আয়োজন মূলত পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ হিসেবে নির্ধারিত ছিল। কিন্তু আয়োজক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের যুক্ত হওয়ায় সেটি পরিণত হয়েছে ত্রিদেশীয় সিরিজে।
এই সিরিজটি শেষ হবে ঠিক একদিন আগে, অর্থাৎ ৮ সেপ্টেম্বর, এবং পরদিন ৯ সেপ্টেম্বর থেকেই শুরু হবে এবারের এশিয়া কাপের ম্যাচ। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এই ত্রিদেশীয় সিরিজকে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর জন্য কার্যকর একটি প্রস্তুতির ক্ষেত্র হিসেবে দেখা হচ্ছে। আফগানিস্তান ও পাকিস্তান এমনিতেই এশিয়া কাপে অংশ নিচ্ছে। আর তদের সঙ্গে ম্যাচ খেলতে খেলতে আমিরাতের কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার দুর্লভ সুযোগ পাচ্ছে আমিরাতও। এমন একটি সময়ে বাংলাদেশ দল চাইলে এই সিরিজে অংশ নিয়ে এশিয়া কাপের জন্য চমৎকারভাবে প্রস্তুতি নিতে পারত।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এই সুযোগটি কেন কাজে লাগাতে পারল না, তা নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠছে। কারণ, বিসিবির সঙ্গে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি) এবং পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)-এর উর্ধ্বতন ব্যক্তিদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রয়েছে। এসিসি ও পিসিবি’র বর্তমান প্রধান মহসিন নাকভির সঙ্গে বিসিবির সম্পর্ক বিশেষভাবে ইতিবাচক বলেই ধরা হয়। বিশেষ করে, ভারতের বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশই সম্প্রতি ঢাকায় এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের বার্ষিক সাধারণ সভার (AGM) আয়োজন করেছিল। সে উদ্যোগ এসিসির বর্তমান নেতৃত্বের কাছ থেকে বাংলাদেশের প্রতি একটি কৃতজ্ঞতা বা সৌজন্যের প্রতিক্রিয়া আশা করার যথেষ্ট সুযোগ তৈরি করেছিল।
কিন্তু বিসিবি সে পথে না হেঁটে দেশে বসে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ আয়োজনের পরিকল্পনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অথচ, ঘরের মাঠে ডাচদের সঙ্গে খেলা মানে হলো নিরাপদ ও সহজ প্রতিপক্ষের সঙ্গে ম্যাচ খেলে আত্মতুষ্টি অর্জন করা। সেই তুলনায় পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো প্রতিপক্ষের সঙ্গে আরব আমিরাতের কন্ডিশনে খেলার অভিজ্ঞতা অর্জন করাটা হতো অনেক বেশি কার্যকর, যা লিটন দাস, সাকিব আল হাসানদের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের জন্য এশিয়া কাপের আসল প্রস্তুতি হিসেবে কাজ করত।
এই প্রসঙ্গে বিসিবির ক্রিকেট অপারেশনস বিভাগের প্রধান নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেন, “আমরা যখন আলোচনায় যাই, ততক্ষণে সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। তখন আর কিছু করার ছিল না আমাদের।”
এই বক্তব্য থেকেই বোঝা যায়, বিসিবি বিষয়টি আগেভাগে আঁচ করতে পারেনি। অথচ, কূটনৈতিক তৎপরতা এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চলমান গতিপ্রবাহের সঙ্গে তাল মেলাতে পারলে বিসিবির পক্ষে তৃতীয় দল হিসেবে এই সিরিজে যোগ দেওয়ার সুযোগ তৈরি করা সম্ভব ছিল।
সাবেক ক্রিকেটার ও বিশ্লেষকরাও মনে করছেন, এশিয়া কাপের মতো বড় টুর্নামেন্টের আগে এমন প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলাটা দলের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর পাশাপাশি কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্যও জরুরি।
তাদের মতে, “ঘরের মাঠে নেদারল্যান্ডসের মতো দুর্বল দলের সঙ্গে খেলার চেয়ে আরব আমিরাতে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মতো শক্তিশালী দলের সঙ্গে ম্যাচ খেলা অনেক বেশি প্রয়োজনীয় ও ফলপ্রসূ হতো।”
বাংলাদেশ দল এই মুহূর্তে বিশ্বকাপে হতাশাজনক পারফরম্যান্সের রেশ কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় আছে। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ধারাবাহিকতা গড়ে তোলাও দলের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ। আর সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে কঠিন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচ খেলা ও আন্তর্জাতিক কন্ডিশনে নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি ছিল।
এখন বিসিবির এমন কৌশলগত ভুল ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত না নেওয়ার কারণে বাংলাদেশ হারিয়েছে একটি মূল্যবান প্রস্তুতির সুযোগ। এমন পরিস্থিতিতে দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে বিসিবি সময়ের গুরুত্ব বুঝে দ্রুত ও কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে হলে শুধু মাঠের খেলাই নয়, মাঠের বাইরের কূটনৈতিক কৌশলেও দক্ষ হতে হবে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সামগ্রিক অগ্রগতির জন্য কেবল ভালো খেলোয়াড় বা কোচ নয়, প্রয়োজন দূরদর্শী প্রশাসন, যারা সময়ের চাহিদা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে জানে। এই সিরিজে অনুপস্থিতি বিসিবির জন্য একটি শিক্ষণীয় ঘটনা হয়ে থাকুক, এমনটাই প্রত্যাশা ক্রিকেট মহলের।
বাংলাবার্তা/এমএইচ