
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংস্কারপত্রে বিএনপি সামগ্রিকভাবে সমর্থন জানিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি জানিয়েছেন, কমিশনের দেওয়া ৮২৬টি সংস্কার সুপারিশের মধ্যে ৫১টি সুপারিশে বিএনপির ভিন্নমত রয়েছে। তবে বাকি প্রায় ৭৭৫টি সুপারিশে দলটি পূর্ণ একমত। এই অবস্থান থেকে বোঝা যায় যে, সমন্বিত রাজনৈতিক সংস্কারের উদ্যোগে বিএনপি কার্যত অংশগ্রহণমূলক ও ইতিবাচক ভূমিকাই রাখতে চায়।
শুক্রবার (১ আগস্ট) চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদরাসার মহাপরিচালক মুফতি আবদুস সালাম চাটগামী হাফিজাহুল্লাহর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সালাহউদ্দিন আহমদ এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, “জুলাই জাতীয় সনদের আওতায় জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য কমিশন যে সুপারিশগুলো দিয়েছে, তার মধ্যে মাত্র ৫১টি বিষয়ে আমাদের ভিন্নমত রয়েছে। অর্থাৎ আমরা সামগ্রিকভাবে এই প্রক্রিয়াকে সমর্থন করছি এবং বাকিগুলোর বাস্তবায়নে প্রস্তুত রয়েছি। বিএনপির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই সেই কাজ শুরু হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “বিএনপি মনে করে, জাতীয় জীবনের সংকট সমাধানে এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা নিরসনে একটি গ্রহণযোগ্য রোডম্যাপ দরকার, আর এই ঐকমত্য কমিশনের কাজ সেই রোডম্যাপ গঠনের দিকে এক বড় পদক্ষেপ।”
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “সংবিধান, নির্বাচন, বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন, দুর্নীতি দমন, পুলিশি সংস্কার এবং জাতীয় সম্পদের সুশাসন প্রতিষ্ঠাসহ যেসব কাঠামোগত সংস্কারের কথা কমিশনের সুপারিশে এসেছে, বিএনপি সেগুলোর প্রায় সবগুলোতেই ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। আমাদের মতপার্থক্য মূলত নির্বাচনী পদ্ধতি, রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার, নির্দলীয় সরকার কাঠামোর রূপরেখা এবং বিচার বিভাগীয় কমিশনের ক্ষমতার পরিধি সংক্রান্ত কিছু সুপারিশে সীমাবদ্ধ।”
তিনি বলেন, “জুলাই সনদের খসড়া সব রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে প্রায় সব দলই সুপারিশগুলো গ্রহণ করেছে। সেই সুপারিশগুলো একত্র করেই এখন ‘জুলাই সনদ’ চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এটা হবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার দিকনির্দেশক দলিল।”
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, “পিআর (প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতিতে নির্বাচন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণা আমরা পাইনি। অথচ কমিশনের সুপারিশে পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে একাংশ সাংসদ নির্বাচন এবং একটি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে, যেটিকে আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।”
তিনি বলেন, “দেশের মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। তারা আর সহিংসতা, দমন-পীড়ন কিংবা স্বৈরতন্ত্র চায় না। সবাই মিলেই একটি গ্রহণযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক পটভূমি গঠনের সময় এসেছে। আমরা চাই, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থের বাইরে এসে বৃহত্তর স্বার্থে ঐক্যমতে পৌঁছাক।”
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, সব রাজনৈতিক দল একসাথে কাজ করলে এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব। কমিশনের সুপারিশ যদি দলগুলো আন্তরিকভাবে গ্রহণ করে এবং সরকার সেগুলোর বাস্তবায়নে আন্তরিক হয়, তাহলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির পথ অনেকটাই সহজ হবে।”
তিনি জাতিকে আশ্বস্ত করে বলেন, “বিএনপি তার দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে আগামী দিনে একটি সমঝোতার ভিত্তিতে টেকসই গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা গঠনে প্রস্তুত রয়েছে।”
এ সময় তার সঙ্গে বিএনপির চট্টগ্রাম মহানগর ও উত্তর জেলার কয়েকজন নেতাও উপস্থিত ছিলেন। সাক্ষাৎ শেষে দারুল উলুম মঈনুল ইসলামের মহাপরিচালক রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরিতে সব দলের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এই সুপারিশমালা এবং জুলাই সনদের মাধ্যমে একটি ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক কাঠামো গঠনের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে—এমনটাই আশা করছেন পর্যবেক্ষকরা। বিএনপির ভিন্নমত থাকা সত্ত্বেও ব্যাপক সংখ্যক সুপারিশে সমর্থন জানানো নিঃসন্দেহে বড় রাজনৈতিক অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ