
ছবি: সংগৃহীত
বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ৫ আগস্টের ঘটনাকে ঘিরে নতুন করে বিতর্ক ও মতবিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং বিএনপির সমর্থক ছাত্র নেতা আবু সাদিক কায়েমের মধ্যে মৌলিক ভিন্নমত প্রকাশ পেয়ে তীব্র সমালোচনা ও পাল্টাপাল্টি অভিযোগের পরিসর তৈরি হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার নাহিদ ইসলাম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাসে দাবি করেন, ৫ আগস্টের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাবনা বিএনপির কাছে সরাসরি দেওয়া হয়েছিল, যা বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল সম্প্রতি যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি সত্য নয়। নাহিদ বলেন, ওই রাতে তাদের প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্তর্বর্তী জাতীয় সরকারের পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছিল এবং তার পরপরই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে জাতীয় সরকার ও নতুন সংবিধানের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। যদিও তারেক রহমান সেই প্রস্তাবে রাজি হননি এবং পরিবর্তে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরামর্শ দেন।
নাহিদ আরও জানান, ৭ আগস্ট ভোরে মির্জা ফখরুলের বাসায় গিয়ে বিএনপি ও উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া উপদেষ্টা পরিষদের শপথ গ্রহণের আগেও তারেক রহমানের সঙ্গে প্রস্তাবিত সদস্যদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে।
তারপরেই নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত নয় এমন সাদিক কায়েম নিজেকে সমন্বয়ক হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিভ্রান্তিকর ভূমিকা পালন করেছেন। ৫ আগস্টের পর থেকে শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশনা সম্পাদক সাদিক কায়েম এই পরিচয় ব্যবহার করে আসছেন বলে তিনি দাবি করেন। নাহিদ বলেন, অভ্যুত্থানে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ভূমিকা স্বীকার করে হলেও এই আন্দোলন এককভাবে তাদের নয়। তিনি সতর্ক করেন, কিছু গোষ্ঠী ক্ষমতার ভাগবাটোয়ারায় লিপ্ত হওয়ার চেষ্টা করছে, যা পরবর্তীতে সামনে আসবে।
নাহিদ আরও উল্লেখ করেন, ২ আগস্ট রাতে ছাত্র সমন্বয়কদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে একটি সামরিক অভ্যুত্থান আয়োজনের চেষ্টা হয়েছিল, যা তারা প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের অবস্থান ছিল ক্ষমতা সেনাবাহিনীর হাতে নয়, বরং গণঅভ্যুত্থানকে সফল করে রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে এগিয়ে যাওয়ার।
সাদিক কায়েম এই অভিযোগের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ৫ আগস্টের পর তার নামে যেসব মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হচ্ছে, তা ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা ছাড়া কিছু নয়। তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লব ছিল সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ যেখানে সকল মতের মানুষ একত্রিত হয়েছিল। তিনি এও বলেন, ‘কখনও আমি কোনো দলীয় পরিচয়ে ক্ষমতার দখল বা আত্মসাৎ করার চেষ্টা করিনি এবং এর কোনো প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না।’
সাদিক কায়েম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যখন ক্ষমতা নিয়ে বিভক্ত, তখন জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছে। তিনি নাহিদ ইসলাম ও অন্যান্য নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, সত্যকে বিকৃত করে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা থেকে বিরত থাকুন এবং জনগণের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, ৫ আগস্টের ঘটনায় ছাত্র নেতৃত্ব, রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে মতপার্থক্য এবং ক্ষমতার ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে বিতর্ক বেশ উস্কে উঠেছে। এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্রের কথা উঠেছে, যার মধ্যে সামরিক হস্তক্ষেপের অপচেষ্টার অভিযোগও রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ঐক্যবদ্ধ না হলে এই অস্থিরতা থেকে দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠা করা কঠিন হবে।
অতএব, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃত্বদের দায়িত্বশীলতা ও পারস্পরিক সংলাপের মাধ্যমে সংঘাত নিরসন করা অপরিহার্য বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। ৫ আগস্টের ঘটনা ও পরবর্তী প্রেক্ষাপটে উঠে আসা বিতর্ক দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক সংকটের সূচনা না হয়ে যেন সংকট নিরসনে পথপ্রদর্শক হয়, সেদিকেই সকলের দৃষ্টি রাখা জরুরি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ