
ছবি: সংগৃহীত
দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে আওয়ামী লীগের একাংশের গোপন কর্মকাণ্ড ঘিরে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সরকারের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার পরও আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-কর্মী গোপনে গেরিলা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। মূল উদ্দেশ্য—সরকার পতনের মাধ্যমে আবার ক্ষমতায় ফিরে আসার পথ সুগম করা। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে ঢাকাকে দখল করবে এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণকে চ্যালেঞ্জ জানাবে।
সূত্র জানায়, দিল্লি, কলকাতা, গোপালগঞ্জ, ঢাকা ও দেশের আরও কিছু অঞ্চলে চালানো হয়েছে এই প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের একটি বড় অংশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, যাঁরা বর্তমানে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত। এমনকি নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও এতে অংশ নিয়েছে। প্রশিক্ষণের আওতায় সামরিক কৌশল, গোপন সমন্বয়, গোয়েন্দা কৌশল এবং বড় আকারের দখল অভিযানের নকশা শেখানো হয়েছে।
এই পরিকল্পনার একটি অংশ হিসাবে ৮ জুলাই রাজধানীর একটি কনভেনশন হলে প্রায় ৪০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেখানে সরকারবিরোধী স্লোগান ও উস্কানিমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। গোয়েন্দা সংস্থার নজরে আসার পর ১৩ জুলাই রাজধানীর একটি আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করে দুজনকে—সোহেল রানা (৪৮) ও শামীমা নাসরিন শম্পা (৪৬)। তাদের দেওয়া জবানবন্দি থেকেই বেরিয়ে আসে এ চাঞ্চল্যকর তথ্য।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তাদের মূল পরিকল্পনা ছিল ঢাকাকে কেন্দ্র করে একটি ভয়াবহ রাজনৈতিক সংঘাত তৈরি করা। দলের হাইকমান্ডের নির্দেশ পেলেই সারাদেশ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নেতাকর্মীরা ঢাকায় ছুটে আসবেন। একযোগে সমবেত হয়ে শাহবাগ মোড় দখল করা হবে। এই দখলমুক্তির মধ্য দিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হবে। এমন বার্তা ছড়ানো হবে যে, আওয়ামী লীগ রাজধানী পুনর্দখল করেছে, প্রশাসনও তাদের পাশে রয়েছে।
এই ভয়ের পরিবেশে সারা দেশে আওয়ামীপন্থী নেতাকর্মীদের রাজপথে নামিয়ে এনে বড় ধরনের সংঘাত তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাতে বিভ্রান্ত হয় বা হস্তক্ষেপ না করে, সেজন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছিল একাধিক বিভ্রান্তিকর বার্তা ও প্রচারণা। পরিস্থিতি পর্যাপ্ত উত্তপ্ত হলে পরবর্তী ধাপে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হতো বলে জানিয়েছে একটি দায়িত্বশীল গোয়েন্দা সূত্র।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, সোহেল ও শম্পার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যগুলো যাচাই করে আরও বড় নেটওয়ার্ক চিহ্নিত করা হচ্ছে। এদের অনেকেই বিদেশে অবস্থান করলেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে কোর গ্রুপের সঙ্গে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে এই পরিকল্পনাকে "রাষ্ট্রবিরোধী ও সরকার পতনের ষড়যন্ত্র" হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) কামরুল হাসান এ বিষয়ে বলেন, "এটি একটি বড় পরিকল্পনার অংশ। তদন্তের স্বার্থে এখনই বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না। সময়মতো সব জানানো হবে।"
এই ষড়যন্ত্রের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর আওয়ামী লীগ কৌশলগতভাবে কিছু পরিকল্পনা পরিবর্তন করেছে। নিরাপত্তা বাহিনীর একটি বিশেষ ইউনিট দিয়ে পুরো বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছে। একই সঙ্গে জড়িতদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ বন্ধ করতে বিষয়টি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, "দেশে কোনো ধরনের নাশকতার শঙ্কা নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। রাজধানীতে ডিএমপির উদ্যোগে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে, যা ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত চলবে।"
তিনি আরও বলেন, "যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সরকার প্রস্তুত। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।"
সাবেক ক্ষমতাসীন দলের অংশবিশেষের এই গোপন প্রশিক্ষণ ও ঢাকায় দখল পরিকল্পনা শুধু রাজনীতিকভাবে নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তার জন্যই বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সব তথ্য যাচাই করে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সময়মতো পুরো নেটওয়ার্ক উন্মোচিত হবে এবং যারা এই ষড়যন্ত্রে জড়িত, তাদের কেউ ছাড় পাবে না।
বাংলাবার্তা/এমএইচ