
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সমন্বয়কদের চাঁদা দাবির খবর পেয়ে গভীর বেদনা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি বেদনায় নীল হয়ে গিয়েছি,’ এবং এমন পরিস্থিতি গণঅভ্যুত্থানের একবছরেই সৃষ্টি হওয়ায় তিনি অত্যন্ত হতাশ। যে তরুণেরা দেশের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবে, তারা এখন চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে – এটি কি ছিল আমাদের প্রত্যাশা?
সোমবার (২৮ জুলাই) দুপুরে ঢাকার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে যুবদলের গ্রাফিতি আর্টস উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্যকালে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, এত তাড়াতাড়ি যদি দেশ এমন অবস্থার শিকার হয়, তাহলে দেশের ভবিষ্যৎ কী হবে? তিনি উল্লেখ করেন, গোটা বাংলাদেশ তরুণ প্রজন্মের দিকে তাকিয়ে আছে, যারা ২০২৪ সালের জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন পথ তৈরি করবে বলে প্রত্যাশিত। কিন্তু তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি জোর গলায় বলতে পারছি না যে, এ দেশ নতুন করে গড়ে উঠবে।’ বরং তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, বর্তমান পরিস্থিতি এমন একটি অবস্থা তৈরি করছে যা ফ্যাসিস্টদের পুনরায় সুযোগ করে দেবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘হাসিনার বিচারের তো কিছু দেখতে পেলাম না, এক বছর হয়ে গেল। যারা প্রকাশ্যে হত্যা করেছে, তাদের কেন গ্রেফতার করা হলো না?’ তিনি বর্তমান সরকারের বিচার ব্যবস্থার প্রতি প্রশ্ন তুলেন এবং বলেন, ‘বিচার যেন একটি নাটক মাত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, বিএনপি সবসময় দেশের সংস্কার ও পরিবর্তনের পক্ষে কাজ করছে। তবে সরকার থেকে এ বিষয়ে কোন দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। ‘তবু যতই চাপ দেয়া হোক, দেশের মানুষ লড়াই করতে জানে। যারা এই দেশকে মুক্ত করেছে, তারাই আজও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।’ তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রচেষ্টার প্রশংসা করে বলেন, ‘তারেক রহমান চেষ্টা করছেন কিভাবে বাংলাদেশকে আবার গড়ে তোলা যায়।’
বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয় যে, তিনি দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিয়মের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ও গণতান্ত্রিক সংস্কারের আহ্বান জানাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘কোনো একটি দল কিংবা একটি সংগঠন একা আন্দোলন করেনি, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সব বয়সের মানুষ—শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত—সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিল। সবাই মিলে স্বৈরাচারকে বিদায় দেওয়া সম্ভব হয়েছে।’
দেশকে সত্যিকার অর্থে পরিবর্তন ও উন্নত করে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে দরকার সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে রিকশাচালক, ভ্যানচালক, শ্রমিক ও কৃষকের মতামত গ্রহণ। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মের দিকে তাকিয়ে আছে পুরো দেশ, তাদের হাত ধরেই সোনার বাংলাদেশ গড়তে হবে।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে থাকা জরুরি। মহিয়সী নারী দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে নিয়ে যথেষ্ট ভালো লেখালেখি হয় না। সাংবাদিক ভাই-বোনেরা কালোকে কালো, সাদাকে সাদা বলতে শিখুন।’
মির্জা ফখরুলের আরও বক্তব্যে উঠে আসে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর চালানো গুম, হত্যা ও গ্রেফতারের ঘটনা। তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীদের ডিবি অফিসে নিয়ে জুলুম ও নির্যাতন করা হয়েছে। যুবদলের ৭৯ জন এবং ছাত্রদলের ১৪২ জন শহীদ হয়েছেন। যার যা অবদান রয়েছে, তা তাকে দেওয়া হবে। সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতে হবে।’
তিনি এক্ষেত্রে সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে আমাদের নেতাকর্মীরা ১৫ বছর ধরে লড়াই করেছে, কিন্তু এক বছর পলায়ন করেও তাকে ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে হত্যার বিচার কেন হচ্ছে না?’
মির্জা ফখরুল স্পষ্ট করলেন যে, বিএনপি ও তার নেতারা দেশের জন্য একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করছেন এবং বাংলাদেশকে আবার সুস্থ, উন্নত ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন, যা দেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি।’
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই বক্তব্যে বিএনপি একটি নতুন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংস্কার সূচনার সংকেত দিচ্ছে, যেখানে দেশের যুব সমাজকে কেন্দ্র করে সুষ্ঠু ও ন্যায়সঙ্গত একটি রাজনীতি প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পাচ্ছে। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট ও বিভাজন কাটিয়ে উঠতে এই ধরনের উন্মুক্ত আলোচনা ও নেতৃত্ব প্রয়োজন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ