
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারক এবং ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় মার্কিন তুলা থেকে তৈরি পোশাকের শুল্কমুক্ত সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য চাপ দিবেন। এই বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের পোর্টফোলিওয়ালা বিশেষ করে পোশাক খাতের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দরবারে দাবী জানানো হচ্ছে। আলোচনার তৃতীয় দফা ২৯ জুলাই শুরু হয়ে ৩১ জুলাই পর্যন্ত চলবে।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল জানিয়েছেন, মার্কিন তুলা থেকে তৈরি পোশাকের ওপর শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার না পেলে বিদ্যমান ১৫ শতাংশ শুল্কই বজায় রাখা হবে। তবে ৩৫ শতাংশ শুল্ক হার মেনে নেওয়া হবে না। বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রায় চার বিলিয়ন ডলারের তুলা আমদানি করে, যার পাঁচ শতাংশ আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। তিনি বলেন, "মার্কিন তুলার গুণগত মান অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালো হওয়ায় বাংলাদেশে মার্কিন তুলার চাহিদা অনেক।"
যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি বাড়ানোর মাধ্যমে বাংলাদেশ তার বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা কমাতে পারে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। এর আগে বাংলাদেশের বার্ষিক তুলা চাহিদার ১৮ শতাংশ মেটাতো যুক্তরাষ্ট্র থেকে, তবে বর্তমানে আফ্রিকা থেকে তুলা আমদানি বেড়েছে এবং মার্কিন তুলার আমদানি কমেছে।
শওকত আজিজ রাসেল আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানিতে সময়সীমা তুলনামূলক বেশি — ৯০ দিনেরও বেশি সময় লাগে, যা আমদানিতে জটিলতা সৃষ্টি করে। মার্কিন তুলার দাম অন্যান্য দেশের তুলনায় দুই থেকে তিন সেন্ট বেশি হওয়াও আমদানিকে কিছুটা সীমিত করেছে।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে পোশাক ব্যবসায়ীর পাশাপাশি একজন সয়াবিন আমদানিকারক এবং একজন তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ব্যবসায়ী রয়েছেন। এলপিজি ব্যবসায়ী জানান, সরকারি আলোচনার ফাঁকে তিনি মার্কিন এলপিজি রপ্তানিকারকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন, যাতে বাংলাদেশে এলপিজি আমদানি বাড়ানো যায় এবং বাণিজ্য ঘাটতি কমানো সম্ভব হয়।
অপরদিকে, সয়াবিন আমদানিকারক বাংলাদেশের মার্কিন সঙ্গে বাণিজ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে মার্কিন সয়াবিন রপ্তানিকারকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছেন। সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিলের (ইউএসএসইসি) কর্মকর্তারাও বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
মার্কিন শুল্ক হার আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশ সরকার ও ব্যবসায়ীরা তৃতীয় দফার আলোচনায় শক্তিশালী অবস্থান নিতে চাইছে। শুল্কমুক্ত সুবিধা না পেলে সরকার ৩৫ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ শুল্ক হার বজায় রাখার জন্য দরকষাকষিতে জোর দেবে।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য মার্কিন তুলা থেকে তৈরি পোশাকের ওপর শুল্কমুক্ত সুবিধা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এটি বাংলাদেশের রপ্তানিতে বিশেষ অবদান রাখবে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক হবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে দেশের পোশাক খাতের জন্য সর্বোচ্চ সুবিধা আদায় করতে সচেষ্ট থাকবে। এছাড়া তুলা আমদানির সময়সীমা হ্রাস ও শুল্কহার কমানোর মাধ্যমে আমদানির পরিবেশ উন্নত করাই তাদের অন্যতম লক্ষ্য।
এই দফার আলোচনায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতার পথ প্রশস্ত করতে মরিয়া। ভবিষ্যতে মার্কিন তুলা থেকে তৈরি পোশাকের জন্য শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি আরও প্রসারিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ