
ছবি: সংগৃহীত
দীর্ঘ তিন বছর পর মিয়ানমারের জান্তা সরকার বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দেশজুড়ে চালানো জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিয়েছে। একইসঙ্গে জান্তা সরকারের পক্ষ থেকে এই বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা এসেছে। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সিদ্ধান্ত মিয়ানমারের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি বড় পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে, তবে নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নানা প্রশ্ন ও সমালোচনা তুলেছে।
সেনাবাহিনীর জান্তা শাসনের তিন বছর
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে দেশটির ক্ষমতা দখল করে জরুরি অবস্থা জারি করেছিল। এরপর থেকেই দেশটি সেনা শাসনের কঠোর নিয়ন্ত্রণে থাকে, রাজনৈতিক সংগঠনগুলো নিষিদ্ধ ও গ্রেফতারির শিকার হয়। এই সময়কালে মিয়ানমারে ব্যাপক সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের খবর পাওয়া গেছে। জরুরি অবস্থা জারির পর সেনাবাহিনী সরকার দেশ পরিচালনা করেছে অত্যন্ত কঠোরভাবে, গণতন্ত্রের সূচকগুলো প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার ও নির্বাচন
বৃহস্পতিবার জান্তা সরকারের মুখপাত্র জাও মিন তুন এক বার্তায় জানিয়েছেন, “আজ থেকে জরুরি অবস্থা বাতিল করা হলো।” এর সঙ্গে তারা জানিয়েছেন, আগামী ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে দেশব্যাপী জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু করা হয়েছে। এই নির্বাচন মিয়ানমারের রাজনীতিতে পুনরায় গণতন্ত্রের পথে ফেরার সুযোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
তবে উল্লেখযোগ্য যে, মিয়ানমারের প্রধান বিরোধী দলগুলো ইতোমধ্যে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় যথেষ্ট নয়। এছাড়া নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনো অত্যন্ত জটিল এবং দেশের জনগণের মধ্যে যথেষ্ট অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন বাস্তবায়ন কতটুকু সুষ্ঠু হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধে আহ্বান জানিয়ে আসছে।
বিরোধী দলগুলো দাবি করছে, সেনাবাহিনী তাদের রাজনৈতিক বিরোধী মুছে ফেলার চেষ্টা করছে এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেই তা মেনে নেওয়া যাবে না। এমন অবস্থায় নির্বাচনে কতটুকু প্রকৃত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বজায় থাকবে তা প্রশ্নবিদ্ধ।
দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক অবস্থা
তিন বছর সেনা শাসনের ফলে মিয়ানমারের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সামাজিক অবস্থা অস্থিতিশীল হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে, বেসরকারি খাত সংকুচিত হয়েছে, এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানও নিচে নেমেছে। জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পুনরুদ্ধারে সহায়ক হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি
মিয়ানমারের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের আয়োজন করা এবং দেশের জনগণের রাজনৈতিক অধিকার পুনরুদ্ধার করা। সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় মিয়ানমার একটি স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে কিনা, তা আগামী মাসগুলোতে স্পষ্ট হবে।
সংক্ষিপ্তসারে
-
২০২১ সালে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে জরুরি অবস্থা জারি করেছিল।
-
৩ বছরের বেশি সময় পর আজ (৩১ জুলাই) জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার।
-
ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা।
-
বিরোধী দল ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা এবং উদ্বেগ প্রকাশ।
-
রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য অপেক্ষায় দেশের মানুষ।
মিয়ানমারে এই পরিবর্তন নতুন আশার দিগন্ত উন্মোচন করেছে, তবে এর সফল বাস্তবায়নের জন্য বহুমুখী প্রচেষ্টা ও সময় প্রয়োজন হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ