
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের ঘোষণা এসেছে। এই খবরে ব্যবসায়ী মহলে কিছুটা উদ্বেগ তৈরি হলেও সরকার একে মোটেই নেতিবাচকভাবে দেখছে না। বরং, সরকারের উচ্চপর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আশ্বস্ত করছেন, এই শুল্ক আরোপ সত্ত্বেও বাংলাদেশের পণ্য বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতার জায়গা হারাবে না এবং যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি ধারা বাধাগ্রস্ত হবে না।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন শুক্রবার (১ আগস্ট) এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, "বাংলাদেশের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় আমরা প্রতিযোগিতামূলক অবস্থায় থাকব। যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের রফতানি বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।" তিনি আরও বলেন, "তবে আমরা ২০ শতাংশের নিচে শুল্ক প্রত্যাশা করেছিলাম।"
এই বক্তব্যটি তার নিজস্ব ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া পোস্টে তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব শফিকুল আলম। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে তৃতীয় দফার শুল্ক আলোচনা শেষ হওয়ার পর হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে বাংলাদেশের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল। পরে তা কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়। সর্বশেষ চূড়ান্ত আলোচনায় তা আরও কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা অনেকেই ইতিবাচকভাবে দেখছেন। কারণ, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের শুল্ক হার এখন কিছুটা অনুকূল পর্যায়ে রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ ঘোষিত শুল্ক হার অনুযায়ী, ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার ওপর ২০ শতাংশ, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার ওপর যথাক্রমে ২০ ও ১৯ শতাংশ এবং পাকিস্তানের ওপর ১৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রীলঙ্কা ও ভিয়েতনাম প্রায় সমান স্তরে রয়েছে, আর পাকিস্তান ও কম্বোডিয়ার চেয়ে সামান্য বেশি শুল্কের আওতায় রয়েছে বাংলাদেশ।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে রফতানির জন্য মূলত যেসব পণ্য বাংলাদেশ থেকে যায়—যেমন পোশাক, হোম টেক্সটাইল, চামড়া, হস্তশিল্প এবং কিছু কৃষিপণ্য—এইসব খাতে দেশের উৎপাদন খরচ ও শ্রমমূল্য তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় এমন শুল্ক হারেও প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা বজায় রাখা সম্ভব।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, "আমরা শুল্ক আলোচনায় খুবই সক্রিয় ছিলাম। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক এবং বাণিজ্যিক উভয় পর্যায়ে আমরা প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রেখেছি। আমাদের দাবি ছিল আরও কম শুল্ক হারে পৌঁছানো। তবে ২০ শতাংশে যেটা এসেছে, সেটা অনেকটাই কূটনৈতিক বিজয়। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাব ভবিষ্যতে এই হার আরও কমানোর।"
এদিকে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো বলছে, পূর্ববর্তী ৩৭ শতাংশ শুল্কের তুলনায় এটি একটি স্বস্তির খবর। পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্ট অনেক উদ্যোক্তা বলছেন, ২০ শতাংশ হার হলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ধরে রাখার জন্য নতুন কৌশল নিচ্ছেন।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রফতানি আয় গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত। এর মধ্যে আবার তৈরি পোশাক খাত সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে। রফতানির প্রায় ৮৫ শতাংশ আয় আসে এ খাত থেকেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রধান রফতানি গন্তব্যগুলোর একটি। ফলে শুল্ক ইস্যুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।
তবে তারা এটাও বলছেন, বর্তমান বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় শুল্ক একটা বিষয় হলেও অন্য বিষয়গুলোও গুরুত্ব পাচ্ছে—যেমন শ্রমিক অধিকার, পরিবেশবান্ধব উৎপাদন, নিরাপদ কর্মপরিবেশ ইত্যাদি। বাংলাদেশের উচিত এসব খাতে উন্নয়ন অব্যাহত রাখা যাতে যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতেও রফতানি বাজারে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখা যায়।
সার্বিকভাবে সরকারের এই প্রতিক্রিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার ফলাফলে বিশেষজ্ঞ মহল এবং উদ্যোক্তারা আপাতত আশ্বস্ত হলেও ভবিষ্যতের জন্য কৌশল নির্ধারণে এখনই প্রস্তুত থাকতে বলছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা মনে করেন, রফতানি বহুমুখীকরণ, পণ্যের গুণগত মান উন্নয়ন এবং নীতি সহায়তা অব্যাহত থাকলে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব ক্রমান্বয়ে আরও বাড়বে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ