
ছবি: সংগৃহীত
বর্তমান প্রযুক্তি জগতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) দ্রুত বিস্তার ঘটছে, যার অন্যতম উদাহরণ হলো ওপেনএআই-এর তৈরি বিশ্বখ্যাত চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি। এটি শুধু একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত চ্যাটবট নয়, বরং ডিজিটাল সহকারীর ভূমিকা পালন করছে, যেটি মানুষকে বিভিন্ন কাজ করতে সাহায্য করছে। সম্প্রতি প্রযুক্তি বিশ্লেষক এবং ওপেনএআই থেকে প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে, চ্যাটজিপিটির দৈনিক গড় প্রম্পট বা ব্যবহারকারী প্রশ্নের সংখ্যা ২৫০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে মাত্র যুক্তরাষ্ট্র থেকেই প্রতিদিন প্রায় ৩৩ কোটি প্রম্পট আসছে। এই পরিসংখ্যান আধুনিক প্রযুক্তির যুগে মানুষের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় আসক্তি এবং তার ব্যাপক ব্যবহার বৃদ্ধির কথা স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত করছে।
চ্যাটজিপিটির অসাধারণ জনপ্রিয়তা মূলত এর স্বজ্ঞাত, সহজ ব্যবহারযোগ্য ইন্টারফেস এবং বহুমুখী কার্যক্ষমতার কারণে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী, গবেষক, উদ্যোক্তা ও বড় বড় প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে লোকজন এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তথ্য অনুসন্ধান, লেখা তৈরি, কোডিং, শিক্ষামূলক সহায়তা, ব্যবসায়িক পরিকল্পনা, ক্রিয়েটিভ কাজ এবং আরও নানা দিক থেকে সহায়তা পাচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এ ধরনের প্রকল্প যেমন চ্যাটজিপিটি মানুষের দৈনন্দিন কাজের ধরন ও জীবনযাত্রাকে বদলে দিচ্ছে, তেমনি এটি প্রযুক্তির ভবিষ্যত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ওপেনএআইয়ের পক্ষ থেকে প্রকাশিত তথ্য এবং বিশ্লেষকরা এটিকে প্রযুক্তি খাতে একটি বিপ্লব বলে অভিহিত করছেন।
যদিও গুগলের মূল সংস্থা অ্যালফাবেট তাদের সার্চ ইঞ্জিনে দৈনিক অনুসন্ধানের সংখ্যা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেনা, তথাপি বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার তথ্য অনুসারে গুগলে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি অনুসন্ধান হয়। ডিজিটাল মার্কেটিং সংস্থা এনপি ডিজিটালের প্রতিষ্ঠাতা নিল প্যাটেলের মতে, গুগলের দৈনিক অনুসন্ধানের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৩৭০ কোটি, আর অন্য সংস্থা স্পার্কটোরো ও ডাটোসের তথ্য মতে এটি ১ হাজার ৬৪০ কোটির কাছাকাছি।
এই তুলনায় চ্যাটজিপিটির ব্যবহার ২৫০ কোটি হলে তা গুগলের তুলনায় কম হলেও তার দ্রুত বৃদ্ধি চিহ্নিত হচ্ছে। গত বছরের ডিসেম্বরে ওপেনএআইয়ের সিইও সাম অল্টম্যান জানিয়েছিলেন, সেই সময় চ্যাটজিপিটি দৈনিক প্রায় ১০০ কোটি প্রম্পট পাচ্ছিল। মাত্র আট মাসের মধ্যে এই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে, যা প্রযুক্তি বিশ্বে চ্যাটজিপিটির এক অগ্রগতি নির্দেশ করে।
সম্প্রতি ওপেনএআই তাদের ‘চ্যাটজিপিটি এজেন্ট’ নামে একটি নতুন টুল উন্মোচন করেছে, যা ব্যবহারকারীদের কম্পিউটারে বিভিন্ন কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পাদন করাতে সক্ষম। এটি শুধু ওয়েব ব্রাউজিংয়ের জন্য নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক ডিজিটাল সহকারী হিসেবে ডিজাইন করা হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ চ্যাটজিপিটিকে গুগল ক্রোমের সঙ্গে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দাঁড় করাবে।
বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ এখন চ্যাটজিপিটির মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক টুল ব্যবহার করছেন। এটি তথ্য অনুসন্ধান এবং দৈনন্দিন কাজকে আরও সহজ ও দ্রুততর করেছে। ওপেনএআইয়ের এই উদ্ভাবন প্রযুক্তির এক নতুন যুগের সূচনা করেছে, যেখানে মানব ও মেশিনের সহযোগিতা আরও ঘনিষ্ঠ এবং কার্যকর হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তবে ভবিষ্যতে চ্যাটজিপিটি গুগলসহ অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনের ব্যবহারকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই দ্রুত বিকাশ প্রযুক্তির পরিধি ও গুণগত মানকে নতুন মাত্রায় উন্নীত করছে।
প্রতিদিন ২৫০ কোটি প্রম্পট সামলাতে সক্ষম চ্যাটজিপিটি কেবল একটি প্রযুক্তি নয়, বরং এটি একটি বৈপ্লবিক উদ্ভাবন যা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনছে। ওপেনএআইয়ের এই প্রকল্পের সফলতা প্রমাণ করে যে, ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিই হবে মানুষের দৈনন্দিন কাজের অন্যতম প্রধান সহায়ক। বিশ্ব এখন এই পরিবর্তনের সাক্ষী হয়ে উঠেছে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই অভিযাত্রা ক্রমেই নতুন দিগন্ত ছুঁয়ে যাবে বলে আশাবাদী প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ