
ছবি: সংগৃহীত
জাপানের আয়িচি জেলার একটি শহরে নতুন এক বিতর্কিত প্রস্তাব সামনে এসেছে, যা দেশটিতে প্রথমবারের মতো নজর কাড়ছে। তোইয়োকে নামের ওই শহরে স্মার্টফোন ব্যবহারে সর্বোচ্চ সময়সীমা নির্ধারণ করতে উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। শহরে বসবাসরত প্রায় ৬৯ হাজার নাগরিককে দিনে সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টা পর্যন্ত অবসর সময়ে স্মার্টফোন ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়ার প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। এ প্রস্তাব অনুমোদিত হলে আগামী অক্টোবর থেকে তা শহরজুড়ে একটি দিকনির্দেশনা বা গাইডলাইন হিসেবে কার্যকর হতে পারে।
শহরের মেয়র মাসাফুমি কোকি এক বিবৃতিতে বলেন, প্রস্তাবটি বাধ্যতামূলক নয় এবং কারও ওপর কোনো বিধিনিষেধ আরোপের উদ্দেশ্যও নেই। বরং এটি পরিবারে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করবে এবং স্মার্টফোনে অতিরিক্ত আসক্তি ঠেকাতে সহায়ক হবে। তিনি আরও জানান, কাজ বা পড়াশোনার জন্য ব্যবহৃত সময় এই সীমার আওতায় পড়বে না। রান্না, ব্যায়াম, অনলাইন শেখা বা ই-স্পোর্টসের মতো কার্যক্রমে ব্যবহৃত সময়ও বাদ যাবে। মূলত অবসর সময়ের অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম কমানোই লক্ষ্য।
কোকি বলেন, স্মার্টফোন আজ জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠলেও এর নেতিবাচক প্রভাবও স্পষ্ট। অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে যেতে অনিচ্ছুক হয়ে পড়ছে। আবার প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে অনেকে রাত জেগে ফোন ব্যবহার করছেন, ফলে ঘুমের সমস্যা ও পারিবারিক যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। তিনি মনে করেন, এ প্রস্তাব মানসিক ও সামাজিক সুস্থতায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মেইনিচির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইতোমধ্যেই এ প্রস্তাব নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। ফোন ও ইমেইলের মাধ্যমে অন্তত ১২০ জন মতামত জানিয়েছেন। তাদের প্রায় ৮০ শতাংশই বিরোধিতা করেছেন। বিরোধীদের মতে, দৈনিক দুই ঘণ্টার সীমা বাস্তবসম্মত নয়। বিশেষ করে যারা সিনেমা দেখতে চান কিংবা দীর্ঘসময় ধরে অনলাইন বই পড়েন, তাদের জন্য এই সময় যথেষ্ট নয়। তবে আবার কিছু নাগরিক এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের রাত ৯টার মধ্যে এবং উচ্চশিক্ষার্থী ও প্রাপ্তবয়স্কদের রাত ১০টার মধ্যে স্মার্টফোন ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ বিষয় নিয়েও ব্যাপক আলোচনা চলছে। জাপান টাইমসের প্রতিবেদনে একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “দুই ঘণ্টায় তো একটি বই পড়াও শেষ করা যায় না, সিনেমা দেখা তো আরও অসম্ভব।”
সব মিলিয়ে, প্রস্তাবটি এখনো আলোচনা পর্যায়ে রয়েছে। অক্টোবরে স্থানীয় আইনপ্রণেতাদের অনুমোদন পেলে তা কার্যকর হবে কিনা তা জানা যাবে। তবে জাপানে স্মার্টফোন ব্যবহারের সীমা নির্ধারণের এ ধরনের উদ্যোগ এবারই প্রথম নেওয়া হলো।
বাংলাবার্তা/এমএইচও