
ছবি: সংগৃহীত
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা বহুল আলোচিত তিনটি দুর্নীতির মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে আসামিদের অনুপস্থিতিতে আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন আনুষ্ঠানিকভাবে এই তিন মামলায় অভিযোগ গঠন করেন। মামলাগুলো পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের আওতায় সরকারি প্লট অবৈধভাবে বরাদ্দ, ভুয়া নথিপত্র তৈরি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক স্বার্থে সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ সংক্রান্ত বলে জানা গেছে।
দুদকের প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম জানান, প্রথম মামলায় শেখ হাসিনাসহ মোট ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। দ্বিতীয় মামলায় শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১৭ জন। তৃতীয় মামলায় শেখ হাসিনা, তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।
তিনটি মামলারই মূল অভিযোগ হলো, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের আওতায় ৩০ কাঠা মূল্যবান সরকারি জমি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়, যেখানে জাল নথি, অনুমোদনপত্র ও ভুয়া প্রকল্প পরিকল্পনা দেখিয়ে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি করা হয়েছে।
আসামিরা কেউই বৃহস্পতিবার আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। ফলে বিচারক তাদের বিরুদ্ধে পলাতক আসামি হিসেবে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন এবং আগামী ১১ আগস্ট মামলার প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণের দিন নির্ধারণ করেন। প্রসিকিউশন পক্ষ জানায়, মামলার জটিলতা, উচ্চপর্যায়ের অভিযুক্তদের অনুপস্থিতি এবং বিদেশে অবস্থানের কারণে বিষয়টি রাজনৈতিকভাবেও সংবেদনশীল।
দুদক বলছে, এ মামলাগুলো তাদের দীর্ঘ অনুসন্ধান ও তদন্তের ফসল। দেশি-বিদেশি ব্যাংক ট্রান্সফার, ভূমি অফিসের রেকর্ড, রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির জটিল কাঠামো বিবেচনায় তদন্ত করা হয়েছে। তাদের বক্তব্য, “আসামিরা যেই হোক না কেন, প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিশেষজ্ঞ মহল বলছে, এই মামলাগুলো শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে উঠা ব্যাপক দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগের সবচেয়ে বড় উদাহরণগুলোর একটি। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তার ছেলে এবং মেয়ে—দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক পরিবারের তিন সদস্যের একসাথে এই মামলায় আসামি হওয়া বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন।
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এই বিচারকে ‘জনগণের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা’ হিসেবে দেখছে এবং আশা প্রকাশ করছে, এতে অতীতের ‘দুর্নীতির সংস্কৃতির’ বিচার হবে। যদিও আওয়ামী লীগ বা তাদের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে এই বিচারিক কার্যক্রম শুরু নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ এটিকে আইনের শাসনের বিজয় হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ বলছেন—এটি রাজনৈতিক প্রতিশোধের অংশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিচার প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা এখনই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তারা মনে করছেন, মামলার স্বচ্ছ বিচার না হলে এটি রাজনৈতিক বিভক্তি আরও বাড়াতে পারে।
পূর্বাচল প্লট জালিয়াতি মামলায় শেখ হাসিনা, জয় ও পুতুলের বিচার শুরু হওয়াকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ এক মোড় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এই বিষয়ে নজর বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত বিচার প্রক্রিয়া কীভাবে অগ্রসর হয় এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কতটা কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ