
ছবি: সংগৃহীত
দেশের রপ্তানি খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলার পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলা কমেছে ১১ দশমিক ১১ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যে বলা হয়েছে, এই দুই মাসে রপ্তানিকারকরা মোট ১৭১ কোটি ডলারের ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলেন, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৯৩ কোটি ডলার। অর্থাৎ মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে প্রায় ২২ কোটি ডলার কমে গেছে।
কিন্তু অন্যদিকে, ব্যাক টু ব্যাক এলসির নিষ্পত্তি বা সম্পূর্ণতা বেড়েছে ৬ দশমিক ১০ শতাংশ, যা নির্দেশ করে, যা আগে খোলা হয়েছিল সেই এলসিগুলো নিষ্পন্ন হচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈদেশিক বাজারের চাহিদার ওঠা-নামা এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা মূলত এ নেতিবাচক প্রবণতার পেছনে দায়ী।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে মোট এলসি খোলা হয়েছে ১ হাজার ১৪৮ কোটি ডলারের, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ১ হাজার ৬০ কোটি ডলার ছিল। অর্থাৎ মোট এলসি খোলার ক্ষেত্রে বৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ২৮ শতাংশ। একই সময়ে এলসির নিষ্পত্তিও বেড়েছে ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর অর্থ হলো দেশে ভোগ্যপণ্য, কাঁচামাল ও জ্বালানির আমদানি বাড়লেও, শিল্প ও উৎপাদন খাতের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে পতন দেখা দিয়েছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি মাত্র ০.৭২ শতাংশ বেড়েছে, যা অর্থনীতিবিদদের মতে উদ্বেগজনক। কারণ মূলধনী যন্ত্রপাতি নতুন শিল্প স্থাপন, বিদ্যমান কারখানা সম্প্রসারণ এবং উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হয়। এই খাতে আমদানির পতন ভবিষ্যতে শিল্প ও উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধি এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, দেশে বর্তমানে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে একটি ‘ট্রানজেকশন পিরিয়ড’ চলছে। এর অর্থ, আগের সরকারের আমলে সক্রিয় আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকদের অনেকেই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন বা চলে গেছেন। ফলে বাজারে নতুন উদ্যোক্তারা আসছেন এবং তারা ব্যবসা সচল রাখতে চেষ্টা চালাচ্ছেন। এই পরিবর্তনের প্রভাব আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে উঠানামা এবং খাতের ভিন্ন প্রবণতা হিসেবে প্রতিফলিত হচ্ছে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা ব্যবসার পরিবেশকে প্রভাবিত করছে। অনেক বিনিয়োগকারী পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। আর্থিক লেনদেন এবং ব্যবসার সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্থিতিশীল পরিবেশ অপরিহার্য, যা বর্তমানে অনিশ্চয়তার কারণে ব্যাহত হচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারের যথাযথ নীতি এবং বাজারে স্থিতিশীলতা না ফিরলে রপ্তানি খাতের প্রবৃদ্ধি দীর্ঘমেয়াদি হুমকির মুখে পড়তে পারে।
অর্থনীতিবিদরা আরও বলছেন, এলসি খোলার ভিন্নধর্মী প্রবণতা দেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থার আভাস দিচ্ছে। একদিকে ভোগ্যপণ্য ও কাঁচামালের আমদানি বেড়েছে, যা দৈনন্দিন চাহিদা পূরণে সহায়ক। অন্যদিকে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে, যা শিল্প ও উৎপাদন খাতে বিনিয়োগের সংকেতকে প্রভাবিত করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শিল্প ও উৎপাদন খাতের দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে মূলধনী যন্ত্রপাতিতে আমদানি বাড়ানো প্রয়োজন, যা নতুন কর্মসংস্থান এবং অর্থনীতির স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
দেশের রপ্তানিকেন্দ্রিক শিল্প খাতের জন্য রাষ্ট্র এবং ব্যাংকগুলোর সহযোগিতা অপরিহার্য। অর্থনীতিবিদরা পরামর্শ দিচ্ছেন, নতুন উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে বিনিয়োগ প্রণোদনা, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি সহজীকরণ এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা প্রয়োজন। অন্যথায়, দেশের রপ্তানি খাত দীর্ঘমেয়াদি হুমকির মুখে পড়বে।
বাংলাবার্তা/এসজে