
ছবি: সংগৃহীত
দেশজুড়ে টানা বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহর, উপজেলায় রাতভর চলা বৃষ্টির ফলে সড়ক-মহাসড়কে পানি জমে মানুষের চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। দুর্গাপূজা উদযাপনকারী সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ এবং ছুটিতে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পথে থাকা মানুষদের সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। রাজধানীর নিউমার্কেট, আজিমপুর, গ্রীন রোড, আরামবাগ, মালিবাগ, মৌচাক মার্কেট, মিরপুরের কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়া এলাকার মানুষ হাঁটু থেকে কোমর সমান পানির মধ্য দিয়ে চলাচল করছেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে থাকা লঘুচাপটি গতকাল বিকেলে উত্তর-উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়েছে এবং এটি আরও ঘনীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপে রূপ নিতে পারে। উপকূলীয় এলাকায় দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছে, আগামী তিন দিন ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে ঢাকার জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
উপকূলীয় এলাকায় সতর্কতার অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া, উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে স্বল্প সময়ের নোটিশে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে হবে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানাচ্ছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগের পাশাপাশি ভারতের আসাম ও ত্রিপুরার উজান এলাকায় ভারী বৃষ্টি হতে পারে। ফলে চট্টগ্রাম, ফেনী, লালমনিরহাট, নীলফামারী, শেরপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যার শঙ্কা রয়েছে। ফেনীর মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। তিস্তা নদীর পানি লালমনিরহাট ও নীলফামারীতে সতর্কসীমায় পৌঁছাতে পারে। ময়মনসিংহ বিভাগের সোমেশ্বরী, ভূগাই ও কংস নদীর পানিও সতর্কসীমায় পৌঁছার সম্ভাবনা আছে।
বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় নদীগুলোতে স্বাভাবিকের তুলনায় উচ্চতর জোয়ার দেখা দিয়েছে এবং আগামী তিন দিন এ অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে।
ঢাকায় রাতের বৃষ্টিতে নগরের অসংখ্য সড়ক-রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। নিউমার্কেট, আজিমপুর, গ্রীন রোড, আরামবাগ, মালিবাগ, মৌচাক মার্কেট, মিরপুর ও শেওড়াপাড়া এলাকায় হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি জমেছে। দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের সড়ক পানির নিচে থাকায় সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মাহবুবুর রহমান তালুকদার জানান, রাতের বৃষ্টিতে ঢাকার প্রায় সব এলাকায় পানি জমেছিল, তবে দুপুর নাগাদ ৮০ শতাংশ এলাকা থেকে পানি নেমেছে। উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এ বি এম সামসুল আলম জানাচ্ছেন, খাল ও ড্রেন পরিষ্কারের কারণে পূর্বের তুলনায় জলাবদ্ধতা কমেছে। তবে বিমানবন্দর এলাকার উন্নয়নকাজের কারণে সেখানে পানি জমার সমস্যা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে ৩-৬টি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে ১-২টি নিম্নচাপে রূপান্তরিত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। অক্টোবরের প্রথমার্ধে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বিদায় নিলেও ওই মাসে গড়ের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে বৃষ্টির পরিমাণ বেশি থাকবে।
অতএব, দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনকে জরুরি ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে যেন বন্যা ও জলাবদ্ধতার কারণে মানুষের দুর্ভোগ কমানো যায়।
নভেম্বর ও ডিসেম্বরে কুয়াশার প্রকোপ বাড়বে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় রাত থেকে সকালে হালকা থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। ডিসেম্বর মাসে উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে এক থেকে দুটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ (৮–১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বয়ে যেতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ