
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্র আবারও সরকারি অচলাবস্থার বা শাটডাউনের মুখে পড়েছে। অর্থবছরের শেষ দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে ফেডারেল সরকারের তহবিলের বরাদ্দ শেষ হয়ে যাওয়ায় জরুরি সেবা ছাড়া অন্যান্য সরকারি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এ ধরনের পরিস্থিতি দেশটিতে ছয় বছর পর পুনরায় ঘটল। সিনেটে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ব্যয়-সংক্রান্ত বিল পাস করার বিষয়ে একমত না হওয়ার কারণে এ অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
সরকারি অচলাবস্থার কারণে জরুরি ছাড়া সব সরকারি অফিসে কার্যক্রম স্থগিত। বিমান চলাচল, পার্ক সেবা, মহাকাশ গবেষণা এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম প্রভাবিত হচ্ছে। বিবিসি জানিয়েছে, ফেডারেল সরকারের প্রায় ৪০ শতাংশ কর্মী—সাড়ে সাত লাখের বেশি—অবৈতনিক ছুটিতে রয়েছেন। এর মধ্যে নাসা তাদের ৮৩ শতাংশ কর্মীকে ছুটিতে পাঠিয়েছে।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসও এ পরিস্থিতির প্রভাবে তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হালনাগাদ করছে না। তবে পাসপোর্ট ও ভিসা সেবা সীমিতভাবে চালু থাকবে।
ক্ষতির বিষয়গুলো
-
অর্থনীতি ও বাজারে প্রভাব: শাটডাউনের কারণে বিশ্বের বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে—প্রতি আউন্স ৩,৮৯৫ ডলার।
-
পর্যটন ও ভ্রমণ: বিমান ও ট্রেন চলাচলে বিলম্ব ও বাতিলের সম্ভাবনা। নিরাপত্তাকর্মী ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের বেতন বন্ধ থাকায় পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে।
-
সরকারি সংস্থা ও গবেষণা: নাসা ছুটি ঘোষণা করেছে; জাতীয় পার্ক ও অন্যান্য সরকারি কার্যক্রম স্থগিত।
যুক্তরাষ্ট্রে নতুন অর্থবছর ১ অক্টোবর শুরু হওয়ার আগে ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ চূড়ান্ত করা প্রয়োজন। তবে সিনেটে বিল পাসের জন্য প্রয়োজনীয় ৬০টি ভোট নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। বিলটির পক্ষে ৫৫ ভোট পড়লেও বিপক্ষে ৪৫ ভোট থাকার কারণে অচলাবস্থা সৃষ্টি হলো। সিনেটে রিপাবলিকানদের ৫৩টি আসন থাকলেও প্রয়োজনীয় সমর্থন মিলেনি।
দোষারোপ ও রাজনৈতিক উত্তেজনা
-
হোয়াইট হাউস: তাদের ওয়েবসাইটে শাটডাউনের কাউন্টডাউন ঘড়িতে “ডেমোক্র্যাট শাটডাউন” লেখা ছিল।
-
ডেমোক্র্যাটরা: রিপাবলিকানদের দোষারোপ করছেন। সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বলেছেন, ট্রাম্প ও রিপাবলিকানরা জনগণের স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় নিতে চাচ্ছেন না।
-
রিপাবলিকানরা: ডেমোক্র্যাটরা সরকারের কার্যক্রম বন্ধ করতে ভোট দিয়েছেন বলে অভিযোগ।
যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৮০ সাল থেকে এ ধরনের শাটডাউন প্রায় ১৫ বার ঘটেছে। সময়কাল একদিন থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত।
-
বিল ক্লিনটন (১৯৯৫-৯৬) এবং জর্জ ডব্লিউ বুশ (১৯৯০): শাটডাউন সামাল দিয়েছেন।
-
বারাক ওবামা (২০১৩): সংক্ষিপ্তকালীন শাটডাউন।
-
ডোনাল্ড ট্রাম্প: নিজের মেয়াদে দুইবার এই অচলাবস্থা দেখেছেন।
সবশেষে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বড়দিন ও নববর্ষের ছুটির মুখে ফেডারেল সরকার অর্থ বিল পাস করে শাটডাউন এড়িয়ে গিয়েছিল। এবারেও পরিস্থিতি যত দ্রুত সমাধান না হবে, ততদিন মার্কিন নাগরিক ও সরকারি সেবা প্রভাবিত থাকবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ