
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা আজ বুধবার (২ অক্টোবর) দশমীর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে। চারদিনব্যাপী পূজার নানা আচার-অনুষ্ঠান, ভক্তদের আনন্দ-উচ্ছ্বাস, ঢাকঢোলের বেজে ওঠা আর আলো ঝলমলে সাজসজ্জার সমাপ্তি ঘটছে আজকের দিনে। মন্দির-মণ্ডপে এখন বিদায়ের আবেগ, দেবী দুর্গাকে কৈলাশে স্বামীর গৃহে ফিরে যাওয়ার প্রার্থনায় ভক্তরা মগ্ন।
বুধবার সকালে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরসহ রাজধানীর বিভিন্ন মন্দির ও পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের ভিড়। নবমীর সকালে সম্পন্ন হয় মহাস্নান ও তর্পণ, ষোড়শ উপচারে পূজা, এবং দেবীকে নিবেদন করা হয় ১০৮টি নীলপদ্ম। এরপর যথারীতি ভক্তরা অঞ্জলি দেন এবং প্রসাদ বিতরণ করা হয়।
ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী, মূলত নবমীই পূজার শেষ দিন। নবমীর নিশীথেই উৎসবের সমাপ্তি ঘটে। এ কারণে নবমী শুধু আধ্যাত্মিকতা নয়, বিদায়ের বেদনায়ও ভরে ওঠে। সনাতন বিশ্বাস মতে, নবমী তিথিতে দেবী দুর্গা অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে শুভ শক্তির আবির্ভাব ঘটান। এদিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আচার হলো সন্ধিপূজা—যা অষ্টমীর শেষ ২৪ মিনিট এবং নবমীর প্রথম ২৪ মিনিট মিলিয়ে ৪৮ মিনিটব্যাপী চলে। এ সময়ে দেবী চামুণ্ডার পূজা হয়। বিশ্বাস করা হয়, এই মুহূর্তেই মহিষাসুর বধ হয়েছিল এবং ভগবান রামচন্দ্র জয় করেছিলেন রাবণকে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, “দুর্গা মায়ের বিদায়ের ঘণ্টা বেজে গেছে। কৈলাশে ফিরে যাবেন মা দুর্গা। আবার আমাদের অপেক্ষা শুরু হবে আগামী বছরের পূজার জন্য।” তিনি আরও জানান, এবারের পূজা শান্তিপূর্ণভাবে, নিরাপত্তার ঘেরাটোপে এবং ভক্তদের অংশগ্রহণে অত্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে। রাজনৈতিক দল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সাধারণ মানুষের সহযোগিতার কারণে এ বছর সনাতনী ধর্মাবলম্বীরা নির্বিঘ্নে পূজা উদযাপন করতে পেরেছেন বলেও তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে কোস্ট গার্ড বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে উপকূলীয় ও নদী তীরবর্তী পূজামণ্ডপগুলোতে। মোট ২০৭টি মন্দির ও মণ্ডপে গোয়েন্দা নজরদারি ও বাড়তি টহল চালানো হচ্ছে। এরমধ্যে ঢাকা জোনে ২৫টি, পূর্ব জোনে (চট্টগ্রাম) ৫৬টি, পশ্চিম জোনে (মোংলা) ৪৪টি এবং দক্ষিণ জোনে (ভোলা) ৮২টি মন্দির ও মণ্ডপ রয়েছে।
বুধবার সকালে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ার শ্রী রামকৃষ্ণ মিশনে দুর্গাপূজার নিরাপত্তা পরিদর্শনে এসে কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. জিয়াউল হক বলেন, “আমাদের বাড়তি তৎপরতার কারণে উপকূলীয় ও নদী তীরবর্তী এলাকায় ২০৭টি পূজামণ্ডপে নির্বিঘ্নে দুর্গোৎসব পালিত হচ্ছে। সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়াতে বিশেষ ডুবুরি দল সর্বক্ষণ প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া নৌ দুর্ঘটনা রোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং নিয়মিত টহল অব্যাহত রয়েছে।”
বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাবেন ভক্তরা। ঢাকঢোলের তালে, উলুধ্বনি আর শঙ্খধ্বনির সঙ্গে নদী ও জলাশয়ে প্রতিমা বিসর্জন হবে। তবে বিদায়ের সুরের মধ্যেও লুকিয়ে থাকে আগামী বছরের জন্য নতুন আশার আলো। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে দেবী দুর্গা আবারও ফিরে আসবেন মর্ত্যে, শান্তি, সমৃদ্ধি ও আনন্দের বার্তা নিয়ে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ