
ছবি: সংগৃহীত
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন এখন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপি নানা কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা সাজাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভূমিকা ও দেশে ফেরা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা দীর্ঘদিন ধরেই চলমান। এরই মধ্যে বিএনপির পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ও সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবির স্পষ্ট করে জানিয়েছেন—আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি সরাসরি তারেক রহমানের নেতৃত্বেই অংশ নেবে।
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফিরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “তারেক রহমান বিএনপির নেতৃত্ব দেবেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। তিনি যখন দেশে ফিরবেন, তখন দিনক্ষণ দল থেকে জানানো হবে। তারিখ যখন চূড়ান্ত হবে, তখন গণমাধ্যমও অবগত হবে।”
হুমায়ুন কবির আরও বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, তারেক রহমান নেতৃত্বে বিএনপি দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে একটি গণতান্ত্রিক ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে পরিবর্তনের পথে এগিয়ে যাবে। তার দেশে ফেরা কেবল সময়ের ব্যাপার। এটি নিয়ে অযথা বিতর্কের সুযোগ নেই।”
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। তারা নির্বাচনের জন্য যথাযথ প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো শঙ্কা নেই। ইনশাআল্লাহ ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”
এ সময় তিনি বিএনপি সমর্থক ও নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বার্তা দেন, “দলীয় নেতাকর্মীদের এখন ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নেতৃত্বের প্রশ্নে বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। আগামী নির্বাচন তারেক রহমানের নেতৃত্বে হবে, এটিই দলের চূড়ান্ত অবস্থান।”
তিনি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, “সম্প্রতি নিউইয়র্কে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের ওপর আওয়ামী লীগপন্থী সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে। এই ঘটনা প্রমাণ করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। কেন আন্তর্জাতিক মহলে তাদের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে, সেটি এর মধ্য দিয়েই পরিষ্কার হয়ে গেছে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে এ ধরনের বক্তব্য মূলত কর্মী-সমর্থকদের আশ্বস্ত করার কৌশল। দীর্ঘদিন বিদেশে অবস্থান করলেও তারেক রহমানকে সামনে রেখেই বিএনপি সংগঠিত হতে চাইছে। এতে একদিকে যেমন দলীয় নেতৃত্বে বিভ্রান্তি দূর করার চেষ্টা হচ্ছে, অন্যদিকে সরকারের ওপরও চাপ তৈরি করা হচ্ছে যাতে নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির অবস্থান দুর্বল না হয়।
হুমায়ুন কবিরের এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আবারও স্পষ্ট হলো—আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবেন তারেক রহমান। তবে তিনি কবে দেশে ফিরবেন, সেটি এখনও রহস্যাবৃত। যদিও হুমায়ুন কবিরের কথায় ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, দিনক্ষণ ঠিক হলে তা প্রকাশ্যে জানানো হবে।
রাজনীতির মাঠে এখন প্রধান আলোচনার বিষয়—তারেক রহমানের দেশে ফেরা এবং নির্বাচনী মাঠে সরাসরি সক্রিয় হওয়া। বিএনপির একাংশ মনে করছে, তারেক রহমান দেশে ফিরলে নেতাকর্মীদের মনোবল দ্বিগুণ হবে এবং আন্দোলন থেকে নির্বাচনী প্রচার—সবকিছু আরও গতি পাবে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, তারেক রহমান দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় তার দেশে ফেরা সম্ভব নয়।
সব মিলিয়ে, ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, তারেক রহমানকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে জল্পনা ততই বেড়ে চলেছে। বিএনপি এখন অপেক্ষা করছে সেই দিন-তারিখ ঘোষণার, যখন দলের নেতা সরাসরি দেশে ফিরে নির্বাচনী ময়দানে নামবেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ