
ছবি: সংগৃহীত
ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলে আঘাত হানা ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ৬৯ জনে। আহত হয়েছেন দেড়শরও বেশি মানুষ। ৬ দশমিক ৯ মাত্রার শক্তিশালী এই ভূমিকম্প স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টার কিছু পর সেবু প্রদেশের উপকূলে আঘাত হানে। বুধবার (১ অক্টোবর) দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেন। ভূমিকম্পের ফলে বহু ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অবকাঠামো ভেঙে পড়েছে। এখনো অনেক মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি হওয়ায় সেবু প্রদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একক প্রদেশ হিসেবেই এখানে ৫৯ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। সেবুর বোগো শহর ও আশপাশের এলাকায় ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ার পাশাপাশি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে রোগীর চাপ হঠাৎ বেড়ে গেছে। সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা র্যাফি আলেজান্দ্রো জানিয়েছেন, আহতদের বড় একটি অংশ এখনো চিকিৎসার অপেক্ষায় আছেন। হাসপাতালের ভেতর অতিরিক্ত রোগী জায়গা না পাওয়ায় অনেককে বাইরে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
ফিলিপাইনের প্রাদেশিক সরকার ভূমিকম্পের পর সেবু ও আশপাশের এলাকায় দুর্যোগকালীন অবস্থা ঘোষণা করেছে। বিদ্যুৎ ও পানির লাইন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অনেক এলাকায় এখনো সরবরাহ বন্ধ। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ চালু করতে কাজ করছে বিশেষ টাস্কফোর্স। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, ভূমিকম্পের আঘাতে বহু স্কুল, বাজার ও সরকারি স্থাপনা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ফার্ডিনান্ড মার্কোস জুনিয়র এক বিবৃতিতে নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি বেঁচে যাওয়া মানুষদের সহায়তা ও পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়ে বলেন, মন্ত্রিপরিষদের একাধিক সদস্য ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম সরাসরি তদারকি করছেন। তিনি আরও জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
ভূমিকম্পের পর উদ্ধারকাজ শুরু হলেও আফটারশকের কারণে কাজ ব্যাহত হচ্ছে। দেশটির আগ্নেয়গিরি সংস্থা জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত অন্তত ৬১১টি আফটারশক আঘাত হেনেছে। এসব আফটারশকের কারণে ভেঙে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। সান রেমিজিও শহরকেও দুর্যোগকালীন অবস্থায় ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানকার ভাইস মেয়র আলফি রেইনস জানিয়েছেন, উদ্ধারকর্মীদের জন্য খাদ্য, পানি ও ভারী যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
যদিও সেবু ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে দেশটির দ্বিতীয় ব্যস্ততম আন্তর্জাতিক প্রবেশপথ ম্যাকটান-সেবু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সচল রয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এতে করে বিদেশি সহায়তা ও ত্রাণ দ্রুত পৌঁছানো সম্ভব হবে। পর্যটনকেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত সেবুতে প্রায় ৩৪ লাখ মানুষ বসবাস করেন। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের বড় অংশই এ অঞ্চলের বাসিন্দা।
ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ভূমি থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অগভীর কেন্দ্রস্থল হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক হয়েছে। তবে প্রশান্ত মহাসাগরীয় সুনামি সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, এ ভূমিকম্পের ফলে সুনামির কোনো আশঙ্কা নেই।
ফিলিপাইনের ইতিহাসে ভূমিকম্প নতুন নয়। তবে এবারের ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্প দেশটির সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের একটি হয়ে উঠেছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, কারণ উদ্ধারকাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ