
ছবি: সংগৃহীত
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য ‘বিশেষ সুবিধা’ প্রদান সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনা জারি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। বুধবার (৩০ জুলাই) মাউশির বাজেট শাখার সহকারী পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এই নতুন নির্দেশনা জারি করা হয়।
এই নির্দেশনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সব বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য ‘বিশেষ সুবিধা’ প্রদান পদ্ধতি আরও সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, জাতীয় বেতন স্কেলের তুলনীয় গ্রেড-৯ থেকে তদূর্ধ্ব গ্রেডে অবস্থানকারী শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রতি বছর ১ জুলাই তারিখে তাদের মূল বেতনের ১০ শতাংশ হারে বিশেষ আর্থিক সুবিধা পাবেন। অর্থাৎ যারা তুলনামূলক উচ্চ বেতন গ্রেডে আছেন, তাদের জন্য নির্ধারিত হলো ১০ শতাংশ হারে ‘বিশেষ সুবিধা’।
অন্যদিকে, তুলনামূলকভাবে নিম্ন বেতন গ্রেড অর্থাৎ গ্রেড-১০ থেকে তদনিম্ন গ্রেডে থাকা শিক্ষক ও কর্মচারীরা প্রতি বছর ১ জুলাই তারিখে মূল বেতনের ১৫ শতাংশ হারে ‘বিশেষ সুবিধা’ পাবেন। তবে তাদের ক্ষেত্রে এই সুবিধার পরিমাণ সর্বনিম্ন ১৫০০ টাকা নির্ধারিত থাকবে। অর্থাৎ, কেউ যদি ১৫ শতাংশ হিসেবে ১৫০০ টাকার কম পান, তবে তাকে ১৫০০ টাকা দেয়া হবে।
এই নির্দেশনা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকেই এই হারে ‘বিশেষ সুবিধা’ কার্যকর হবে এবং প্রতি বছর ১ জুলাই তারিখে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মচারীরা তা প্রাপ্ত হবেন।
নতুন এই নির্দেশনার মাধ্যমে পূর্বের একটি আদেশও বাতিল করা হয়েছে। অর্থ বিভাগের ২০২৩ সালের ১৮ জুলাইয়ের একটি আদেশ, যা একই বিষয়ে জারি করা হয়েছিল, তা বাতিল করে এই নতুন নির্দেশনা কার্যকর করা হয়েছে।
কাদের জন্য এই সুবিধা প্রযোজ্য:
-
সকল এমপিওভুক্ত বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারী
-
এমপিওভুক্ত বেসরকারি মাদ্রাসা শিক্ষক ও কর্মচারী
-
এমপিওভুক্ত বেসরকারি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারী
এই সিদ্ধান্তকে বেসরকারি শিক্ষক সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও স্বস্তিদায়ক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরেই বেসরকারি শিক্ষকরা সরকারি শিক্ষকদের তুলনায় বৈষম্যের শিকার হচ্ছিলেন বলে অভিযোগ করে আসছিলেন। বিশেষ করে বেতন-ভাতা, উৎসব ভাতা ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে অনেক সময় জটিলতা ও বিলম্ব দেখা যায়।
নতুন এই নির্দেশনার মাধ্যমে ‘বিশেষ সুবিধা’ প্রাপ্তির পদ্ধতি ও পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দেয়ায় শিক্ষকদের মধ্যে একটি স্বচ্ছতা তৈরি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে যারা নিম্ন গ্রেডে রয়েছেন, তাদের জন্য ১৫ শতাংশ হারে এবং সর্বনিম্ন ১৫০০ টাকার নিশ্চয়তা উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক এবং বিদ্যমান বাজেট কাঠামোর আলোকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকেও সময়মতো শিক্ষক-কর্মচারীদের এই সুবিধা প্রদানের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
এছাড়া এই নির্দেশনার আলোকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও তদারকির সময় শিক্ষকদের ‘বিশেষ সুবিধা’ কার্যকরভাবে প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করারও তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
বেসরকারি শিক্ষক সংগঠনগুলোর নেতারা এই পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তাদের ভাষ্য, এই ‘বিশেষ সুবিধা’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিক্ষকদের কিছুটা হলেও আর্থিক স্বস্তি আসবে। তবে তারা এটিও বলছেন, সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য পুরোপুরি দূর করতে আরও ব্যাপক ও স্থায়ী নীতিগত পরিবর্তন দরকার।
সব মিলিয়ে, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য ‘বিশেষ সুবিধা’ নিয়ে মাউশির এই নতুন নির্দেশনা দেশের শিক্ষা প্রশাসনের এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। শিক্ষক-কর্মচারীদের আর্থিক স্বীকৃতি ও প্রণোদনার এমন উদ্যোগ ভবিষ্যতে শিক্ষার মানোন্নয়নের পথও সুগম করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ